পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
৯১৩

একটু নড়িলে চড়িলে উহারাও তাহার সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়া দাঁড়াইয়াছিল।

 কাঁকড়ার চেহারা দেখিলে আমার ভারি হাসি পায়। প্রথমত উহার চক্ষু দুটি। এক একটি চোখ এক একটি বেঁটার আগায় বসান। ঐরাপ দুই চক্ষু দিয়া যখন সে তোমার দিকে তাকাইবে, তখন তোমার মনে হইবে যেন তোমাকে ভালো করিয়া দেখিবার জন্য সে দূরবীন লাগাইয়াছে। ভয়, বিস্ময় বা কৌতুহল হইলে চোখ কেমন বড় হইয়া উঠে দেখিয়াছ? হঠাৎ দেখিলে মনে হয়, যেন চোখ দুটি একটু বাহির হইয়া আসিয়াছে। বোধহয়, এইজন্যই কাকড়ার চেহারায় এতটা কৌতুহলের ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার পর উহার দুটি গোদা হাত, অর্থাৎ দাঁড়া। আমি যে কাঁকড়াগুলির কথা বলিতেছি, তাহাদের আবার একটি দাঁড়া আর একটির চাইতে ঢের বড়। কাহারো ডাইনেরটি বড় কাহারো বামেরটি বড়। বেশি ভারী কাজ হইলে বড় দাডাটা ব্যবহার করে। ছোটটি হালকা কাজের জন্য। কাকড়ার মুখ তাহার বুকের কাছে দাঁড়ায় করিয়া তাহাতে খাবার তুলিয়া দেয়। আমরা যেমন করিয়া হা ঁকরি, কাকড়া তাহা করে না; তাহার ঠোট আলমারীর দরজার মতন পাশাপাশি খোলে।

 বালির উপরে কত কাঁকড়ার গর্ত যে রহিয়াছে তাহার সংখ্যা নাই। কাছে গেলেই উহারা ভয় পাইয়া গর্তের ভিতরে চলিয়া যায়। কিন্তু যদি কোনোরূপ গোলমাল না করিয়া চুপচাপ বসিয়া থাক, তাহা হইলে খানিক পরেই উহারা আবার বাহিরে আসিবে। গর্তটিকে পরিষ্কার রাখা উহাদের এক প্রধান কাজ। সকলের গর্তের সামনেই খানিকটা নুতন মাটি দেখিতে পাইবে। হয়তো তোমার চোখের সামনেই আবার খানিকটা মাটি আনিয়া উহার উপরে ফেলিবে। দুহাতে সাপটিয়া ধরিয়া গর্তের ভিতর হইতে মাটি লইয়া আসে। দরজার বাহিরে আসিয়াই তাহা ছুঁড়িয়া দূরে ফেলিয়া দেয়। কাঁকড়ার পক্ষে অনেকখানি দূরেই ফেলে বলিতে হইবে। মাকড়সার মতন বড় কাকড়াটি মটরের মতন বড় একরাশ মাটি প্রায় ছয় ইঞ্চি দূরে ফেলিতে পারে। মনোযোগ দিয়া দেখিলে দেখা যায় যে, মাটি ছুড়িয়া ফেলিবার সময় বড় দাঁড়াটিকেই বেশি ব্যবহার করে।

 গর্তের সামনে কোনো একটি ছোট জিনিস ছুঁড়িয়া ফেলিলে কাঁকড়া তাড়াতাড়ি তাঁহার কাছে ছুটিয়া আসে। তারপর বেশ করিয়া সে জিনিসটাকে হাত বুলাইয়া দেখে; পছন্দ হইলে তাহাকে তুলিয়া মুখে দেয়। একদিন আমি লম্বা সূতায় রুটির টুকরা বাঁধিয়া দিয়াছিলাম। একতা কাঁকড়া আসিয়া সেটাকে পরীক্ষা করিলে, তারপর তাহাকে টানিয়া গর্তের ভিতরে লইয়া গেল। গর্তটা বেশ গভীর ছিল:প্রায় সওয়া ফুট সূতা ট্যারছাভাবে ভিতরে ঢুকিয়া গেল তারপর আমি সূতা ধরিয়া টানিলাম। সহজ টানে কি তাহা বাহির হয়! কাকড়াটা বোধহয় কিছুতেই রুটিটুকুকে ছাড়িয়া দিতে প্রস্তুত ছিল না;তাই সে যতক্ষণ পারিল প্রাণপনে তাহাকে আকড়িয়া ধরিয়া রাখিল। শেষে অগত্যা রুটির সঙ্গে সঙ্গে বাহিরে আসিয়া উপস্থিত। তখনো সে তাহা ছাড়ে নাই। ঐটুকু খাদ্যের মায়ায় সে এতটা ভুলিয়া গিয়াছিল যে, এদিকে আমি যে তাহাকে একেবারে আমার কাছে টানিয়া আনিয়াছি তাহা সে যেন বুঝিতেই পারে নাই। অবশেষে হঠাৎ একবার যখন রুটির সঙ্গে সঙ্গে সে শূন্যে ঝুলিতে লাগিল, তখন তাহার চৈতন্য হইল। এবারে রুটি ছাড়িয়া দিয়া যে গর্তের ভিতরে ঢুকিল শত প্রলোভনেও আর সে বাহিরে আসিল না।

 ইহারা কেমন ছোটে, তাহা আগেই বলিয়াছি। ভালো মানুষের মতন সোজাসুজি সামনের

উপেন্দ্র—১২৫