পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৯৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৯৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ঘটি আর সেদিন কেহ ব্যবহার করিতে পারে নাই, মাছ খাওয়া তো দূরের কথা।

 সে দেশে হাঙ্গরের নাম ‘ম-গ-র’ (মকর)। এদেশে হাঙ্গরে মানুষ খায়, আর সেদেশে মানুষে হাঙ্গর খায়। হাঙ্গরও মানুষকে বাগে পাইলে তাহার ‘গোড় কাটি পক্কাই'তে (পা কাটিয়া নিতে) ছাড়ে না। ‘হাতুড়ে’ হাঙ্গরের মাথাটা ঠিক যেন একটা হাতুড়ির মতন, সেই হাতুড়ির দুই মুখে দুটি চোখ। সুখের বিষয় এই যে, বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে বড়-বড় মানুষখেকো হাঙ্গর কুলের কাছে আসে না। তবে দূরে গভীর জলে যে ভয়ানক রাক্ষস সব আছে, তাহার প্রমাণ প্রায়ই পাওয়া যায়। একদিন দুপুরবেলা আমি সমুদ্রের ধারে বসিয়া আছি, এমন সময় প্রায় মাইলখানেক দূরে একটা প্রকাণ্ড মাছ লাফাইয়া উঠিল। এতদূর হইতে মাছটাকে একটা মানুষের সমান বড় দেখা যাইতেছিল। সেটা লাফাইয়া জল ছাড়িয়া প্রায় দশ হাত উঁচুতে উঠিয়াছিল। ইহা দেখিয়া আমার মনে হইল, যে না জানি কতদূর বেগের সহিত সে ছুটিয়াছিল, যাহাতে এমন ভয়ানক লাফ দিতে পারিয়াছে। আর যাহার তাড়ায় এমন অসম্ভব বেগে ছুটয়াছিল, সেটা না জানি কিরূপ ভয়ানক জানোয়ার।

 আর একটা মাছ আছে তাহার নাম ‘শাকস্’ মাছ। ইহার চেহারা ভারি অদ্ভুত। শরীরটি রুইতনের টেক্কার মতন। তাহার দুই কান হাতির কানের মতন পাতলা। আর এক কোণে ছোট-ছোট দুটি চোখ, আর এক কোণে চাবুকের মতন লম্বা কাঁটাওয়ালা এক লেজ। ঐ লেজ উহার এক ভয়ানক অস্ত্র। উহা দ্বারা অনেকে চাবুক তয়ের করে। শাকস্ মাছের মাংস নাকি বেশ সুখাদ্য।

 ইংরাজিতে যাহাকে ‘সোল’ (Sole) বলে, সেই জাতীয় মাছও সেখানে পাওয়া যায়। এই মাছের চোখ একপেশে। মাছটি চাঁদা মাছের মতন পাতলা। ছেলেবেলায় উহার দুটি চোখ দুপাশেই থাকে আর রঙ সাদা থাকে। কিন্তু ইহার ক্রমাগত বালির উপরে এক পাশে কাৎ হইয়া পড়িয়া থাকার স্বভাব হওয়াতে শেষটা নীচের পাশের চোখটি ক্রমে উপরের পাশে চলিয়া আসে। তাহা ছাড়া উপরের পাশের রঙটি ক্রমে চারিপাশের বালির রঙের মতন হইয়া যায়, কিন্তু নীচের পাশের রঙ সাদাই থাকিয়া যায়।

 বোধহয় মাছের কথা ঢের বলা হইয়াছে। এখন যাহারা মাছ নয়, অথচ মাছ বলিয়া পরিচিত হইয়া গিয়াছে, তাহদের কথা কিছু বলা আবশ্যক।

 ইহাদের মধ্যে সকলের আগে ‘জেলী’ মাছের (Jelly fish) আর ‘তারা’ মাছের (Star fish) কথা বলিতে হয়। জন্তুর মধ্যে ইহারা সকলের চাইতে নিম্নশ্রেণীর। সাধারণ লোকে ইহাদিগকে দেখিয়া কখনই বলিবে না, যে ইহারা কোনোরূপ জন্তু। বরং ইহাদের চেহারা দেখিলে হঠাৎ গাছপালার কথাই মনে হইতে পারে। যাহা হউক, ইহারা জন্তু। ইহাদের আবার নানারকম শ্রেণীভেদ আছে, যদিও আমি একরকম তারা মাছ সেখানে দেখিতে পাই নাই। এই মাছের চেহারা পাঁচ কোণা তারার মতন। তাহার নাক মুখের কোনোরূপ পরিচয় পাওয়া যায় না। ইহাদের স্বভাব-চরিত্র অতিশয় আশ্চর্য। দুঃখের বিষয়, আমি তাহার কিছুই প্রত্যক্ষ করিতে পারি নাই, পুস্তকে পড়িয়াছি মাত্র। ইহারা ছোট-ছোট শামুক ঝিনুক খাইয়া জীবনধারণ করে। পুরীতে যে তারা মাছ দেখিয়াছিলাম, তাহার ভিতরে খুব ছোট-ছোট ঝিনুকের খোলা পাইয়াছি। কিন্তু এতদ্ভিন্ন উহাদের আচার ব্যবহারের আর কোনো পরিচয় পাই নাই। এগুলি দেখিতে একটুও সুন্দর নয়। একদিকের রঙ কালো আর একদিকের রঙ ফ্যাকাসে। মনে হয়,