পাতা:উভয় সঙ্কট - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
দারোগার দপ্তর, ১৬০ সংখ্যা।

মাঠের অর্দ্ধেক গিয়া দেখি—আর একজন লোক মাঠের অপর দিক হইতে আসিয়া এইখানে দুইজনে একত্রিত হইয়াছে! তার পর দুইজনই একত্রে সে মাঠ পার হইয়া গিয়াছে। মাঠের অপর পারে একটা খোলার ঘরের বস্তি। দুইদিকে খোলার ঘর, আর তার মধ্যে সরু রাস্তা—সেই রাস্তা—বড় রাস্তায় গিয়া পড়িয়াছে। সেই সরু রাস্তার মধ্যেও আমি সেই দুইজনের পদ-চিহ্ন ধরিয়া চলিলাম। যখন বড় রাস্তায় আসিয়া উপস্থিত হইলাম, তখন দেখিলাম, আর পদ-চিহ্ন নাই—একখানা গাড়ীর চাকার দাগ স্পষ্ট রহিয়াছে। সেইখানে গাড়ীখানা মোড় ফিরাইয়া চলিয়া গিয়াছে। আমার যেন স্পষ্ট বোধ হইল, সেই গাড়ীতেই সেই দুইজনে চলিয়া গিয়াছে। কিন্তু কোথায় যে গিয়াছে, তাহা আর ধরিতে পারিলাম না—কারণ বড় রাস্তায় সেইরূপ অনেক গাড়ী গিয়াছে— তাহাদের চাকার দাগের সঙ্গে এ গাড়ীর চাকার দাগ ধরিতে পারা গেল না। তখন আমরা ফিরিলাম। আসিতে আসিতে কেনারাম দাদাকে কহিলাম, “কেনারাম-দা, আমাদের আসিবার পূর্ব্বে কে পলাইয়া গিয়াছে—বলিতে পার?”

 কেনা। কেমন করিয়া বলিব ভাই? আমি ত জ্যোতিষশাস্ত্র পড়ি নাই?

 আমি। পুলিস-বিভাগে কর্ম্ম করিতে হইলে সকল শাস্ত্রই জানা উচিত। আসামীর সঙ্গে নিশ্চয়ই একজন স্ত্রীলোক ছিল। কারণ যে খিড়্‌কীর দরজা দিয়া পলায়ন করিয়াছে, সে স্ত্রীলোক। এখন আমি সব বুঝিতে পারিয়াছি—সেই স্ত্রীলোককে বাঁচাইতে গিয়াই আসামী নিজে ধরা দিয়াছে। দাদা, আমার ত মনে হয় এ কেবল খুন নহে, ইহার মধ্যে একটা ভয়ঙ্কর রহস্য লুক্কায়িত আছে।