পাতা:উভয় সঙ্কট - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
দারোগার দপ্তর, ১৬০ সংখ্যা।

বের নিকট যাইতে হইল। আমি তাঁহাকে একে একে সমস্ত কথা জানাইলাম। আমি যে বড়ই নিরুৎসাহ হইয়া পড়িয়াছি, আমার কথাবার্ত্তার ভাবভঙ্গী দেখিয়াই, তিনি তাহা বুঝিতে পারিলেন। আমার কথা শেষ হইলে তিনি কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া কহিলেন, “এ ঘটনাতেও আমাদের নিরুৎসাহ হইবার কোন কারণ আমি দেখিতেছি না। তোমার কি স্মরণ নাই, যে রাত্রে খুনী আসামী ধরা পড়ে, সেই রাত্রে একজন মাতলামীর ভাণ করিয়া পুলিসকে ধরা দেয়, আর ঐ আসামীর সঙ্গে থানায় এক হাজতে থাকিয়া ভোরের সময় পুলিসের চক্ষে ধূলি দিয়া পলায়ন করে। সেই ব্যক্তিই আসামীর জন্য বাড়ী ভাড়া লইয়াছিল, সেই ব্যক্তিই সেই রাত্রে আসামীর সঙ্গিনী স্ত্রীলোককে গাড়ী করিয়া লইয়া যায়। এও তারই কাজ! সেই আসামীকে ঐরূপ বলিতে শিখাইয়া দিয়াছিল, আর সেই নিমুখানসামার লেনে সেই হোটেলওয়ালীর বাড়ীতে একটা সিন্ধুক রাখিয়া পুনরায় আমাদের চক্ষে ধূলি দিবার চেষ্টা করিতেছে।”

 বড়সাহেবের উপরোক্ত কথায় হঠাৎ আমার যেন জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইল। চক্ষের সম্মুখে একে একে আমি সমস্তই যেন দেখিতে পাইতে লাগিলাম। এতক্ষণের পর আমার সে মনের বিষাদ দুর হইয়া গেল, সঙ্গে সঙ্গে আবার আমার মন প্রফুল্লিত হইল। আমি বড়সাহেবকে শত সহস্র ধন্যবাদ দিয়া কহিলাম, “আপনার অনুগ্রহে আমার জ্ঞান জন্মিল। এখন এ রহস্য আমি বুঝিতে পারিয়াছি। এ নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তির চক্রান্ত। কিন্তু এরূপ চতুর লোক যাহার সহায়, তাহার অপরাধের প্রমাণ করিবার উপায় কি?”