পাতা:একঘরে - দ্বিজেন্দ্রলাল রায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একঘরে
১৫

ছিল। টেবিলের ধারে বসিয়া আহার না করিলেও ‘ভাগবত অশুদ্ধ’ হয় না; ও মুরগী না খাইলেও বাঁচি, ও আবশ্যক বোধ হইলে তাহা ছাড়িতেও পারি।

 কিন্তু মহাশয়, এ সকল বিষয় আমি স্বৰ্গীয় ঘৃণার সহিত দেখি। পৃথিবীর নৈতিক সমরে এ সকল তুচ্ছ বিষয়। বুটজুতা পায়ে দেওয়া, টেবিলে খাওয়া, মাংসভক্ষণ করা এ সব সুবিধাও বিলাসের অঙ্গ, নীতি ও ধর্ম্মের নহে। ইহাদিগকে সমাজের রক্ষক করা, ইহাদের একম্বরের নিয়ন্তা করা, সমাজের কর্ত্তব্য নহে। যে সমাজ এ বালুময় ভিত্তির উপর স্থাপিত সে সমাজ থাকে না। এরূপ ভঙ্গুর সমাজ পৃথিবীর কুত্রাপি নাই ও থাকিতে পারে না।

 সমাজের অন্য দৃঢ়তর বন্ধন আবশ্যক। যাহা সমাজের ক্ষয়কারী কীট, মর্ম্মাশী পিশাচ, সেই সকল বিষয় সমাজের প্রশ্ন করুন, সমাজের হর্ত্তা-কর্ত্তা-বিধাতা করুন। একঘরে করিতে চাহেন, আসুন আজ যে সব বিষয় সমাজের অমঙ্গলের হেতু, তাহাদিগকে একঘরে করি। আসুন আজ বলি, যে শঠতা করিবে, মিছা কথা কহিবে, তাহাকে একঘরে করিব; যে স্ত্রী ছাড়িয়া বেশ্যাবৃত্তি করিবে, তাহাকে একঘরে করিব; যে পঞ্চবর্ষীয়া শিশুবালিকার বিবাহ দিবে, তাহাকে একঘরে করিব; যে যুবতীবিধবার স্বেচ্ছিত বিবাহে বাধা দিবে তাহাকে একঘরে করিব; যে স্বজাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিবে তাহাকে একঘরে করিব। আসুন যে সব ব্যাধি জাতির বুকে বসিয়া অবাধে বুকের রক্ত পান করিতেছে, যাহারা নির্ভয়ে উন্নতির প্রেমের সত্যের হৃদয়ে শেল বিঁধিতেছে, তাহাদিগকে একঘরে করি; পীড়নের হেতু করি। সে একঘরেতে দেখিবেন দেশের মঙ্গল হইবে, জাতির জীবন হইবে। সে একঘরে অর্থ অধর্ম্মের প্রতি সমাজের কেন্দ্রীভূত ঘৃণা ও ক্রোধ; সে একঘরের অর্থ অনর্থের উচ্ছেদ; জ্ঞানের সত্যের উদাসের নবরাজ্য।