পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশিরকুমারের নাট্যসাধনা

অভিনয়ের প্রধান কেন্দ্র। তারপর শিশিরকুমার গেলেন অজ্ঞাতবাসে। কিন্তু মনোমোহনের পাণ্ডারা আশ্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়তে না ছাড়তে রঙ্গভূমে প্রবেশ করলেন নির্মলেন্দু লাহিড়ী (বেঙ্গলী থিয়েট্রিক্যাল কোম্পানী) ও “কর্ণার্জুনে”র নবাগত শিল্পিবৃন্দ (আর্ট থিয়েটার লিঃ)। শেষোক্ত সম্প্রদায়ের জনপ্রিয়তা হয়েছিল যথেষ্ট। কিন্তু মনোমোহনও নেববার আগে আর একবার জ্বলে উঠল তৈলহীন প্রদীপের মত। “বঙ্গে বর্গী” (ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র এই পালাটির নাম দিয়েছিলেন “বঙ্গে মুর্গী”) নামক “অখাদ্য” নাটকও দানীবাবুর লম্ফঝম্প ও তর্জনগর্জনের মহিমায় গ্যালারির দেবতাদের অসামান্য দয়াদাক্ষিণ্য লাভ করে। মনোমোহনের অধঃপতনের মুখে সেই পালাটিই হ’ল ঠেকোর মত, তার সাহায্যেই সে আর্ট থিয়েটারের নবাগতদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কোনরকমে সামলে নিতে পারলে। তারপর সে খুললে “আলেকজাণ্ডার”। কিন্তু তরুণ দিগ্বিজয়ীর ভূমিকায় জরাজর্জর দানীবাবুকে কেউ দেখতে চাইলে না। এই সময়েই শিশিরকুমারের পুনরাগমন। ওদিকে আর্ট সম্প্রদায় এবং এদিকে শিশির সম্প্রদায়—দুই দিকে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, মনোমোহনের নাভিশ্বাস উঠতে বিলম্ব হ’ল না। দীপ-নির্বাণের আগে আবার সে খুললে নতুন নাটক “ললিতাদিত্য”। কিন্তু তবু সে বাঁচতে পারলে না। সেখানে আবার নূতন আসর পেতে যবনিকা তুললেন শিশিরকুমার। অভিনীত হ’ল “সীতা”—১৯২৪ খৃষ্টাব্দের ৬ই আগষ্ট তারিখে।

 ঐ তারিখটি বাংলা রঙ্গালয়ের ইতিহাসে সোনার হরপে লিখে রাখবার মত। কারণ “সীতা” নাট্যাভিনয়ে অভিনয় ও প্রয়োগনৈপণ্যের যে সর্বাঙ্গীণ উৎকর্ষ দেখা গিয়েছিল, আগে কেউ তা কল্পনাতেও আনতে পারে নি, এমন কি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তার অভিনয়ে নূতনত্ব, তার দৃশ্যসংস্থানে নূতনত্ব, তার গানের সুরে নূতনত্ব, তার নৃত্য-পরিকল্পনায় নূতনত্ব। অল্পবিস্তর দুর্বলতা ছিল কেবল নাট্যকারের রচনায়, কিন্তু শিশিরকুমারের অপূর্ব আবৃত্তির ইন্দ্রজালে অভিভূত হয়ে সে দুর্বলতাটকু সাধারণ দর্শকরা উপলব্ধি করতে পারত না। শ্রেষ্ঠ

৮৯