পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীকালিদাস রায় প্রভৃতি

পারে, তাঁরা হয়তো কবিতারচনা করতেন খেলাচ্ছলেই, ছিল না তাঁদের কবি হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। কিংবা হয়তো তাঁদের প্রেরণা ছিল স্বল্পজীবী। যেমন কোন কোন ছোট নদী গান গেয়ে জলবেশী দুলিয়ে খানিকদূর এগিয়ে হারিয়ে যায় ঊষর মরু-সিকতায়।

 এমনি একজন কবি হচ্ছেন শ্রীফণীন্দ্রনাথ রায়। যাঁদের লেখার জোরে চলত “অর্চনা” পত্রিকা, তিনি ছিলেন তাঁদেরই অন্যতম। গদ্যও লিখতেন, পদ্যও লিখতেন—যদিও কবিতার দিকেই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশী এবং কবিতা রচনা ক’রে তিনি পাঠকদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছিলেন। তাঁর একখানি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল, তার নাম “লয়”। একদিক দিয়ে নামটি সার্থক হয়েছে, কারণ তারপর ফণীন্দ্রনাথের আর কোন কাব্যপুঁখি বাজারে দেখা দেয় নি। তিনি আজও বিদ্যমান, কিন্তু কবিতার খাতায় আর কালির আঁচড় কাটেন না। তাঁর ছিল নিজস্ব ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্য, তাঁর মধ্যে ছিল যথেষ্ট সম্ভাবনা। তিনি ধনী না হ’লেও অর্থাভাবে কষ্ট পান নি, আজও পায়ের উপরে পা দিয়ে ব’সে নিশ্চিন্ত মনে সরকারি পেন্সন ভোগ করছেন। কেন তিনি কবিতাকে ত্যাগ করলেন? নিশ্চয়ই প্রেরণার অভাবে। শক্তির চেয়েও কার্যকরী হচ্ছে প্রেরণা।

 তিনি লেখা ছেড়েছেন বটে, কিন্তু “অর্চনা” দলের আরো কেউ কেউ সাহিত্যক্ষেত্রে নাম কিনেছেন এবং আজও লেখনী ত্যাগ করেন নি। যেমন শ্রীকেশবচন্দ্র গুপ্তশ্রীঅমরেন্দ্রনাথ রায় (ফণীন্দ্রনাথের অনুজ)। আমিও “অর্চনা”য় হাতমক্স করতুম— লিখতুম কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ।

 ফণীন্দ্রনাথের সঙ্গে জড়িত আছে আমার জীবনস্মৃতির খানিকটা। প্রায় প্রত্যহই তাঁর বাড়ীতে আমাদের একটা সাহিত্যবৈঠক বসত এবং মাঝে মাঝে সেখানে এসে যোগ দিতেন কবিবর অক্ষয়কুমার বড়াল। খোশগল্পের সঙ্গে সঙ্গে চলত সাহিত্য নিয়ে আলোচনা। অক্ষয়কুমার ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সতীর্থ ও কবিবর বিহারীলালের শিষ্য। আবার বঙ্কিমচন্দ্রের “বঙ্গদর্শনে”র লেখক। তাঁর মুখে শুনতে পেতুম সেকালকার সাহিত্যিকদের কথা। কোন কোন দিন ফণীন্দ্রনাথ হারমোনিয়াম নিয়ে

১০৫