“ঋতুমঙ্গল” ও “ক্ষুদকুঁড়া” প্রভৃতি। যখন কাশিমবাজারের স্কুলে পড়তেন, পদ্য লেখা শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। মাসিক পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করবার আগে সভায় প্রথম যে কবিতা পাঠ করেন, তার মধ্যে ছিল মদ্য ও মদ্যপায়ীদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড আক্রমণ। আজও তাঁকে ‘পিউরিট্যান’ কবি ব’লে বর্ণনা করলে অত্যুক্তি হবে না। স্কুলের চেয়ারে ব’সে হয়েছেন পাকা মাস্টারমশাই——ছেলেদের দেন হিতোপদেশ। বাড়ীতে ফিরে কবির আসনে আসীন হয়েও তিনি লেখেন না আর প্রেমের কবিতা। তিনি বৈষ্ণব কবিদের পদাবলীর ভক্ত এবং নিজেও পরম বৈষ্ণব। অথচ বৈষ্ণব কবিরা হচ্ছেন প্রধানতঃ প্রেমের কবিই, এটা দেখেও প্রেমকে তিনি 'বয়কট' ক’রে ব’সে আছেন।
মাথার চুল পাকলে কেউ যে প্রেমের কবিতা লেখে, এটাও তিনি পছন্দ করেন না। আমি তখন পঞ্চাশ পার হয়েছি। আমার এক সাহিত্যিক বন্ধু, এসে বললেন, “কবি কালিদাস রায় অভিযোগ করছিলেন, এ বয়সে হেমেন্দ্র প্রেমের কবিতা লেখে কেন?”
উত্তরে আমি বললুম, “পঞ্চাশোর্ধেও মনে বনে যাবার ইচ্ছা জাগেনি, তাই।”
তার পরেও তো কেটে গিয়েছে এক যুগ। এই সেদিনও “মাসিক বসুমতী”তে লিখেছি কয়েকটি প্রেমের কবিতা। কবির দেহ নিশ্চয়ই বয়োধর্মের অধীন, কিন্তু কবির মনের কি বয়স আছে? সাহিত্যগুরু রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন বয়সেও লিখেছেন প্রেমের কবিতা, প্রেমের গান, প্রেমের গল্প। তাঁর একটি কবিতার খানিকটা তুলে দিলুম:
“ওরে কবি সন্ধ্যা হয়ে এল,
কেশে তোমার ধরেছে যে পাক।
ব’সে ব’সে ঊর্ধ্ব পানে চেয়ে
শুনতেছ কি পরকালের ডাক?
কবি কহে, সন্ধ্যা হ'ল বটে,
শুন্চি ব’সে ল’য়ে শ্রান্তদেহ
এ পারে ঐ পল্লী হ’তে যদি
আজো হঠাৎ ডাকে আমায় কেহ!
১০৯