পাতা:এখন যাঁদের দেখছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এখন যাঁদের দেখছি

না দাদা! আপনাকে কিছু নিরেট খাবার খেতে হবে।”

 আমি বললুম, “এই গঙ্গার ধারে খাবার কোথায় পাবেন?”

 “আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি এখনি আসছি” —ব’লেই তিনি আবার গাড়ীতে গিয়ে উঠলেন। তারপর নিজে চাঙ্গুয়া হোটেলে গিয়ে খাবার কিনে আবার হাসতে হাসতে ফিরে এলেন। সঙ্গে অনুচর ছিল, গাড়ীর চালক ছিল, কিন্তু তবু তিনি খাবার কেনবারভার দিলেন না তাদের হাতে। স্বহস্তে খাবার না কিনে এনে তাঁর তৃপ্তি হ’ল না।

 তাঁর বন্ধুপ্রীতি ও আন্তরিকতার আরো কত প্রমাণই যে পেয়েছি! আমার সহধর্মিণী যখন পরলোকে গমন করেন, তখন তিনি শিলং-এ গিয়েছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্যে। কিন্তু খবর পেয়েই তিনি কলকাতায় ফিরে এসে আমার সঙ্গে দেখা ক’রে করুণ স্বরে বললেন, “দাদা, আপনার এই সর্বনাশের কথা শুনে না এসে থাকতে পারলুম না।”

 নানা ব্যসনের জন্যে ধনিকদের নাম হয় কুবিখ্যাত। ধীরেন্দ্রনারায়ণেরও যদি কোন ব্যসন থাকে এবং যদি তাকে ব্যসন বলা যায়, তবে তা হচ্ছে, সাহিত্য ও শিল্প। সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সাহচর্য লাভ করবার জন্যে সর্বদাই তিনি প্রভূত আগ্রহ প্রকাশ ক’রে থাকেন। এবং তাঁদের সঙ্গে মেলামেশা করেন সমকক্ষ, নিরভিমান, অমায়িক সুহৃদের মতই। ভালোবাসা তাঁর সোদরপ্রতিম। কেবল ভালোবাসা নয়, দুঃস্থ সাহিত্যিকদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনলে তৎক্ষণাৎ তিনি হন মক্তহস্ত। কত সাহিত্যিককে তিনি যে গোপনে অর্থসাহায্য করেছেন, এ কথা বাইরে কোন দিন প্রকাশ পায়নি।  জমিদারী প্রথা তুলে দেওয়া হ’ল। এ প্রথা ভালো কি মন্দ, তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না। কিন্তু এ প্রথা উঠে গেলে দেশে আর কেউ কাশিমবাজারের মণীন্দ্রচন্দ্র ও লালগোলার যোগীন্দ্রনারায়ণের মত দান-শৌণ্ড মহারাজার নাম শুনতে পাবে না। মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ গোপনে যে বিপুল অর্থদান ক’রে গিয়েছেন, কাকপক্ষীকেও তা টের পেতে দেননি। কিন্তু তাঁর যে অন্যান্য দানের হিসাব পাওয়া যায়, তার পরিমাণ হবে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা!

২৭৮