এমন মহাদাতার পৌত্র হয়ে ধীরেন্দ্রনারায়ণও যে বংশের ধারা বজায় রাখবার চেষ্টা করবেন, সে কথা অনায়াসেই অনুমান করা যায়। সাধারণ সৎকার্যে অকাতরে অর্থব্যয় করবার জন্যে সর্বদাই তিনি প্রস্তুত। বীরভূম জেলার কলেশ্বর নামক স্থানে পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় করে প্রকাণ্ড এক শিবমন্দির নির্মাণ ক’রে তিনি নিজের ধর্মপ্রাণতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের 'বয়েজ স্কাউট’দের জন্যেও দান করেছেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। তাঁর সমগ্র দানের পরিমাণ আমার জানা নেই বটে, তবে এ কথা আমি জানি যে, বহু আশ্রম, বহু প্রতিষ্ঠান ও বহু অভাবগ্রস্ত পরিবারকে দরাজ হাতে সাহায্য করতে কুণ্ঠিত হননি। আজ তাঁর জমিদারীর অধিকাংশ হয়েছে পাকিস্তানের কুক্ষিগত, কিন্তু এখনো হ’তে পারেননি তিনি হাতভারী।
মনের জোরও তাঁর কম নয়। ইংরেজ আমলে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিলে উপাধিধারী পরিবারভুক্ত ব্যক্তিগণকে যথেষ্ট বিপন্ন হ’তে হ’ত। তিনি কিন্তু নির্ভয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। লবণ আইন সংক্রান্ত সত্যাগ্রহের সময়ে স্বয়ং অগ্রণী হয়ে সর্বপ্রথমে নিষিদ্ধ লবণ ক্রয় করতে বিরত হননি। এজন্যে সরকারপক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছিল স্বর্গীয় মহারাজের কাছে। এমন কি তাঁর বন্দুকের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল ক’রে দেবার প্রস্তাব হয়েছিল। তিনি কিন্তু ভয় পাননি। বহরমপুরের জেলখানায় গিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতেন। প্রহরীদের উৎকোচে বশীভূত ক’রে আড়ালে সরিয়ে দিয়ে বন্দীদের মধ্যে করতেন অর্থবিতরণ।
একবার “মিলনী” সমিতি ষ্টিমার-পার্টির আয়োজন করে, ধীরেন্দ্রনারায়ণ তখনও রাজা উপাধি পাননি। রবীন্দ্রনাথকে আসবার জন্যে আমন্ত্রণ করা হয়, তিনি কিন্তু অনিচ্ছক। তখন ধীরেন্দ্রনারায়ণ তাঁকে ধ’রে আনতে গেলেন এবং তিনিও হাসিমুখে ধরা দিতে আপত্তি করলেন না। বালক ধীরেন্দ্রনারায়ণ তাঁর কাছ থেকে আদর পেয়েছেন এবং শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয়ও লালগোলার মহারাজের কাছে ঋণী। এ দানের কথা বাইরের কেউ
২৭৯