পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
এপিক্‌টেটসের উপদেশ।

আপনার ইচ্ছানুরূপ কাজ করা অপেক্ষা সেনাপতির আদেশ পালন করা এতই তাহার ভাল বলিয়া মনে হইয়াছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যে অবশ্যম্ভাবিতার আজ্ঞাও কেহ সুবাধ্য হইয়া পালন করিতে চাহে না। আমরা কঁদিতে কাদিতে, আর্ত্তনাদ করিতে করিতে, দুঃখ কষ্ট সহ্য করিয়া থাকি, আর সেই সকল কষ্টকে আমাদের নিয়তি বলিয়া নির্দ্দেশ করি। নিয়তি কিসের বাপু? যদি ভবিতব্যকে নিয়তি বল, তাহা হইলে সকল বিষয়েই তো আমরা নিয়তির অধীন। কিন্তু শুধু যদি মৃত্যুকেই নিয়তি বলিতে হয়, তাহা হইলে, যাহার জন্ম তাহারই মৃত্যু— ইহাতে আবার দুঃখ কিসের? আমরা অসির আঘাতে মরি, চক্রের পেষণে মরি, জলমগ্ন হইয়া মরি, গৃহছাদ-স্থলিত “টালির” আঘাতে মরি, অত্যাচারী রাজার হস্তে মরি। যমালয়ে যে পথ দিয়াই যাই নাকেন, তাহাতে আইসে যায় কি? সব পথই সমান। কিন্তু সত্য কথা যদি শুনিতে চাও, তাহা হইলে বলি, অত্যাচারী রাজা তোমাকে যে পথ-দিয়া যমালয়ে প্রেরণ করেন, তাহাই সর্ব্বাপেক্ষা সিধা পথ। কোন অত্যাচারী রাজা এপর্য্যন্ত কাহাকেও “ছয়মাস ফাঁসি” দেন নাই; কিন্তু জ্বররোগ মানুষকে এক মাস ধরিয়া বধ করিয়া থাকে। ফলতঃ এ সমস্ত ব্যাপার তুমুল শব্দমাত্র—ফাঁকা নামের ঝনৎকার মাত্র।

 ৭। কিন্তু সমুদ্র-যাত্রার সময় আমরা যেরূপ করিয়া থাকি, এসো আমরা এক্ষণে সেইরূপ করি। সেই সময়ে, আমার পক্ষে কি করা সম্ভব?—এইটুকুই আমার পক্ষে সম্ভব—অর্থাৎ জাহাজের সারেং, জাহাজের খালাসি, যাত্রার সুযোগ ইত্যাদি নির্ব্বাচন করা। তারপর, মনে কর, একটা ঝড় উঠিল, আমার তাহাতে কি আইসে-যায়? আমার যাহা করিবার ছিল, আমি তো তাহার কিছুই বাকী রাখি নাই। এখন সমস্যা-চিন্তার ভার আর এক জনের—অর্থাৎ সারেঙের।