পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
এপিকটেটসের উপদেশ।

অমনি ধাত্রী তজ্জন্য আমাদের তিরস্কার না করিয়া, সেই প্রস্তরখণ্ডকেই প্রহার করিত। কিন্তু সেই প্রস্তরখণ্ডের দোষ কি? তোমার শিশুটির নির্ব্বুদ্ধিতার দরুণ, তাহার কি পথ ছাড়িয়া সরিয়া যাওয়া উচিত ছিল? আরো দেখ, স্নান করিয়া আসিয়া, যদি আমরা কিছু খাইতে না পাই, আমাদের শিক্ষক আমাদের বাসনাকে কখনই দমন করিতে বলেন না, পরন্তু তিনি পাচককেই প্রহার করেন। বাপু, তোমাকে তো আমরা পাচকের শিক্ষকপদে নিযুক্ত করি নাই, আমাদের শিশুটীর শিক্ষক করিয়াই তোমাকে নিযুক্ত করিয়াছিলাম—শিশুর যাহাতে সুশিক্ষা, সদভ্যাস ও উন্নতি সাধিত হয় তাহাই তোমার দেখিবার কথা। এই প্রকার, আমরা পূর্ণবয়স্ক হইয়াও শিশুবৎ আচরণ করিয়া থাকি। কেননা, সঙ্গীতে শিশু কে?—যে সঙ্গীতে অনভিজ্ঞ। লেখাপড়ায় শিশু কে? যাহার অক্ষর পরিচয় হয় নাই। জীবনে শিশু কে?—তত্ত্বজ্ঞানে যে অশিক্ষিত।

 ৪। বস্তুসমূহ মনুষ্যকে কষ্ট দেয় না, পরন্তু তৎসম্বন্ধে মানুষের যে সংস্কার তাহাই তাহাকে কষ্ট দেয়। দেখ, মৃত্যু আসলে কিছুই ভীষণ নহে। ভীষণ হইলে সক্রেটিসের নিকটেও ভীষণ বলিয়া প্রতীয়মান হইত। কিন্তু মৃত্যুসম্বন্ধে আমাদের যে সংস্কার, তাহাই ভৗষণ—আমাদের সেই সংস্কারের মধ্যেই যাহা কিছু তাহার ভীষণত্ব। অতএব, যখন আমরা কোন বাধা প্রাপ্ত হই, কোন কষ্টে পতিত হই, কিম্বা শোক-দুঃখে অভিভূত হই, তখন সেই সময়ে আপনাকে ছাড়া—অর্থাৎ আপনার সংস্কার ছাড়া, যেন আর কাহারও দোষ না দেই। যে ব্যক্তি তত্ত্বজ্ঞানে অশিক্ষিত, তাহার কোন কষ্ট হইলে, সে অন্যকে দোষী করে, যে ব্যক্তি শিক্ষা আরম্ভ করিয়াছে, সে আপনাকেই দোষী করে, যে ব্যক্তি সুশিক্ষিত হইয়াছে, সে অন্যকে দোষী করে না, আপনাকেও দোষী করে না।