পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অভ্যাস ও সাধনা।
৪৫

তাঁহার শরণাপন্ন হও। ঝড়ের সময় নাবিক যেমন বরুণদেবকে ডাকে, তেমনি এই প্রলােভন-ঝটিকায় ঈশ্বরকে ডাক। যে ঝড়ে বিবেকবুদ্ধি অভিভূত ও বিপর্য্যস্ত হয়, তাহা অপেক্ষা প্রবল ঝড় আর কি আছে? আর যাহাকে তুমি ঝড় বল—সেই বা কি? সেও ত একটা প্রতীতি মাত্র—একটা অবভাস মাত্র। তাহা হইতে মৃত্যুভয় অপসারিত করিয়া লও,—দেখিবে,—যতই বজ্র বিদ্যুৎ হউক—আকাশ বেশ নির্ম্মল;—দেখিবে, আত্মার কাণ্ডারী সেই বিবেকবুদ্ধি কেমন স্থির ও প্রশান্ত! কিন্তু একবার পরাভূত হইয়া, যদি তাহার পর তুমি বল?—“এইবার আমি জয়ী হইব,” এবং প্রত্যেক বার যদি এই একই কথা তুমি বলিতে থাক, তাহা হইলে নিশ্চয় জানিবে,—অবশেষে তােমার এমন একটা হীনদশা উপস্থিত হইবে—তােমার এমন একটা দুর্ব্বল অবস্থা আসিয়া পড়িবে যে, তখন তুমি পাপ করিতেছ বলিয়া জানিতেও পারিবে না; তখন তুমি সেই পাপ-কার্য্যের জন্য নানাপ্রকার ওজর খুঁজিতে থাকিবে; তখন হেসিয়ডের এই উক্তিটির সত্যতা প্রমাণ হইবে:—

“দীর্ঘসূত্রী যুঝে সদা অশেষ অনর্থ-সাথে।”

 ৭। তবে কি মানুষ এইরূপ দৃঢ়সঙ্কল্প করিয়া চিরকাল নির্দোষ থাকিতে পারে?—না, তাহা পারে না। তবে নির্দোষিতার দিকে অগ্রসর হইবার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করা—মানুষ অন্ততঃ এইটুকু পারে। আমাদের চেষ্টায় একটুও বিরাম না দিয়া, কিছুমাত্র শৈথিল্য না করিয়া, অন্ততঃ দুই চারিটি দোষ হইতেও যদি আমরা মুক্তিলাভ করিতে পারি, তাহা হইলেও আমাদের পরম সৌভাগ্য! তুমি যে এখন বলিতেছ— “কল্য হইতে আমি সাবধান হইব”, এ কথার অর্থ এই —“আজ আমি নির্লজ্জ হইব, দুরাগ্রহী হইব, নীচ হইব; আজ আমাকে কষ্ট দিতে অপরের সামর্থ্য থাকিবে, আজ আমি ক্রোধের বশীভূত হইব, ঈর্ষার বশীভূত