পাতা:এপিক্‌টেটসের উপদেশ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ৷৹ ]

গিয়া উপদেশ দিতে আরম্ভ করিলেন। এইখানেই তিনি জীবনের শেষভাগ বার্ধক্য পর্য্যন্ত অতিবাহিত করেন; এবং এইখানে তিনি যে সকল উপদেশ দিয়াছিলেন তাহাই Arrian লিপিবদ্ধ করিয়া জনসমাজে প্রচার করিয়াছেন।

 তাঁহার উপদেশের মর্ম্মগ্রহণ করিতে হইলে ষ্টোয়িক-সম্প্রদায়ের মতামত ও বৃত্তান্ত কিছু জানা আবশ্যক। জিনো-ষ্টোয়িক দর্শনের স্রষ্টা। তাঁহার জন্মভূমি সাইপ্রস্। তিনি “ষ্টোয়া”তে—অর্থাৎ একটা চিত্রিত খিলান-পথে বসিয়া উপদেশ দিতেন বলিয়া তাঁহার সম্প্রদায় “ষ্টোয়িক” নামে অভিহিত হয়। জিনোর পরে, Chrysippus ও Cleanthes এই দুই প্রখ্যাত আচার্য্য, ষ্টোয়িক-দর্শনকে পরিপুষ্ট করেন। জিনো খৃষ্টপূর্ব্ব ৩০০ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েন। ইহার কিছু পূর্ব্বে অ্যালেকজাণ্ডারপ্রমুখ গ্রীকগণ ভারতভূমির সংস্পর্শে আইসেন। তাই এই সময়ে, গ্রীক দর্শনের উপর প্রাচ্য প্রভাব যে কতকটা প্রকটিত হইবে তাহাতে আশ্চর্য্য নাই। ইহারই পূর্ব্বে Pyrrho হিন্দু-তত্ত্বজ্ঞানীদিগের নিকট শিক্ষা প্রাপ্ত হইয়া স্বপ্নবাদ ও মায়াবাদ গ্রীসে প্রচার করেন। ষ্টোয়িকরা এই মতের বিরোধী হইলেও উহার প্রভাব উঁহারা সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করিতে পারিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় না। তাই এপিক‍্টেটাসের উপদেশে বেদান্তের যেন একটু ছায়া আসিয়া পড়িয়াছে।

 প্রকৃতির পথ অনুসরণ করিয়া জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিবে—ইহাই ষ্টোয়িকদিগের বীজমন্ত্র। কিন্তু “প্রকৃতি” কাকে বলে? তত্ত্বজিজ্ঞাসুর হৃদয়ে ও বিবেক বুদ্ধিতে ঈশ্বরের ইচ্ছারূপে যাহা প্রকাশ পায়, এবং শ্রদ্ধা হৃদয়ে জীবনের ঘটনা সকল পরীক্ষা করিলে, ঐ ঐশী ইচ্ছা সম্বর্য যে সদ্ব্যাখ্যা প্রাপ্ত হওয়া যায় তাহাকেই ষ্টোয়িকরা “প্রকৃতি” বলেন।