পাতা:এরাও মানুষ - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৯৫০).pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মৃত-ব্যক্তি যে কুঁড়ে ঘরে থাকতো, সে ঘরের ছাদ ভেঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছে···ঘরের সামনে যে কাঠের লিঙ্গ-মূর্তি ছিল, সেটা ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছে। কোন পরিবারের কর্তা যখন মারা যায়, তখন এইভাবেই তারা তার থাকবার ঘরের ছাদটা ভেঙ্গে দেয়। যে-পুরুষ পৃথিবী পরিত্যাগ ক'রে কলিকংবোর দেশে যাত্রা করে, সে তো আর সন্তানের জন্ম দিতে পারবে না, তাই তার ঘরের সামনে কাঠের লিঙ্গ-মূর্তিকেও তারা ভেঙ্গে ফেলে দেয়।

 ক্রমশ সকলেই ভুলে যায় তার কথা। জ্যান্ত পৃথিবীর নেশায় মেতে ওঠে আবার তারা।

 সামনেই শিকারের সময়। বর্শা-হাতে ছোটে তারা বনের দিকে। তাদের বাজনায় বেজে ওঠে শিকারের গান। সারাদিন ধরে শাণ দেয় বর্শায়। টগ বগ করে নাচতে থাকে শিরায় রক্ত। প্রমত্ত শার্দুলের সঙ্গে হবে তার মত্ত আদর···মৃতের জন্যে বসে বসে শোক করবার সময় আর নেই···চোখের সামনে ভেসে ওঠে রক্তমাখা বুনো-জন্তুর অন্তিম আস্ফালন···পিচ্‌কিরির মতন ছিট্কে পড়ে রক্তের ধারা···নিশীথ-অরণ্য কেঁপে ওঠে মৃত্যুর তাণ্ডব নৃত্যে। নেচে ওঠে বুনো মানুষের মন···জীবনের আহ্বানে।

 মধ্য-আকাশকে পেরিয়ে বহুক্ষণ হলো সূর্য এগিয়ে চলেছে তার কুঁড়ে ঘরের দিকে, দিগন্ত-রেখার ওপারে অদৃশ্য-লোকে আছে তার দিনান্তে-ফিরে-আসার কুঁড়ে ঘর। আহা, ঐ

১০৪