পাতা:এরাও মানুষ - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৯৫০).pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তাই আগুন হলো এই অরণ্যচারী মানুষদের বন্ধু। তাদের শিকারের সহায়, সঙ্গী। তাদের অন্নদাতা। অন্ধকার নিষ্প্রদীপ ঘন তামসী রাত্রে তাদের ভয়ত্রাতা। শীতের কুহেলি-আচ্ছন্ন রাত্রে তাদের নগ্ন নিরাবরণ দেহের উত্তাপ-রক্ষক।


দশম পরিচ্ছেদ

 দেখতে দেখতে অগ্নি-তাড়িত অরণ্যের চারদিক থেকে জেগে ওঠে আতঙ্কিত আর্তনাদ। বাতাস আর আগুনের শব্দের সঙ্গে মিশে যায় শিকারীর উন্মত্ত উল্লাসিত চীৎকার···তাকে ছাপিয়ে ওঠে, মৃত্যু-ভীত পশুর অন্তিম আর্তনাদ। প্রত্যেক তূণ যেন শব্দ হয়ে ফেটে পড়ে। প্রলয়ের শব্দ।

 আগুন ছুটে চলে···বাতাস তাকে ক্ষেপিয়ে তোলে···বর্শা হাতে শিকারের পেছনে ছুটে চলে শিকারী···চারদিকে শুরু হয় দিকভ্রান্ত ভীত পশুদের উল্লম্ফন···চারদিকে ছুটোছুটি···অরণ্যের পশুর সঙ্গে মানুষের আদিম হত্যা-পিপাসার সংগ্রাম···দয়াহীন, মায়াহীন, ক্ষমাহীন মৃত্যুর খেলা। শিকার এবং শিকারী, কেউ জানে না কে কাকে করবে শেষ। একটু অসতর্ক যদি হয়েছে শিকারী অমনি ক্রুদ্ধ সিংহের থাবায় ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে তার উদর···শিকারীর হাতের লক্ষ্যের মধ্যে এলে মুক্তি নেই শিকারের। এক তিল সময় নেই ভাববার, দাঁড়াবার, অন্যমনস্ক হবার। হয় মারতে হবে, নয় মরতে হবে।

১৪৭