পাতা:ঐতিহাসিক চিত্র (তৃতীয় বর্ষ) - নিখিলনাথ রায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঐতিহাসিক চিত্র।

 বাঙ্গালীর ইতিহাস-সঙ্কলনে প্রবৃত্ত হইলে, চারিদিকে যেন অকূল সমুদ্র দর্শন করিতে হয়। কোথায় তাহার আরম্ভকাল, তাহা স্মৃতিপথ হইতে সম্পূর্ণরূপে অপসৃত হইয়া গিয়াছে। বহু পুরাতন কাহিনী বলিয়াই এরূপ ঘটিয়া থাকিবে। সেই জন্য অনেকে ভারতবর্ষের পুরাতন ইতিহাসকেই বাঙ্গালীর পুরাতন ইতিহাস বলিয়া ধরিয়া লইতে পরামর্শ দান করেন। কিন্তু তাহাতে সংশয়ের অভাব নাই।

 ভারতবর্ষ বহু প্রদেশে বিভক্ত মহাদেশ। এক প্রদেশ হইতে অন্য প্রদেশ অনেক বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। বাঙ্গালা দেশ সেইরূপ। সমগ্র ভারতবর্ষের সহিত বাঙ্গালাদেশের সংস্রব থাকিলেও, বাঙ্গালাদেশের বিশেষত্বের অভাব নাই; সমগ্র ভারতবাসীর সহিত বাঙ্গালীর সংস্রব থাকিলেও, বাঙ্গালীর বিশেষত্ব দেখিতে পাওয়া যায়। সুতরাং বাঙ্গালীর একটি স্বতন্ত্র ইতিহাস। ছিল। সে ইতিহাস বিলুপ্ত না হইলে, বাঙ্গালীর সর্ব্বপ্রকার বিশেষত্বের কার্য কারণশৃঙ্খলা বুঝিতে পারা যাইত।

 বাঙ্গালা দেশের সহিত আর্য্যাবর্ত্তের সংস্রব ছিল; দাক্ষিণাত্যেরও সংস্রবের অভাব ছিল না। কেবল তাহাই নহে,—সমগ্র প্রাচারাজ্যের সহিত বাঙ্গালা দেশের একটি সাক্ষাৎ সংস্রব বর্ত্তমান ছিল। তাহা ছাড়া, পারস্য, আরব এবং মীশর দেশের সঙ্গে ও বাঙ্গালা দেশের কিছু কিছু সাক্ষাৎ সংস্রব বর্ত্তমান থাকারও প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। বাঙ্গালাদেশের সমুদ্রোপকূলে তাহার যে সকল প্রমাণ প্রাপ্ত হইবার সম্ভাবনা ছিল, তাহা কালক্রমে বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। সে সংস্রব কতদিনের সংস্রব, কত দূরদেশের সহিত সংস্রব, কোন্ শ্রেণীর কিরূপ সংস্রব, কিরূপে তাহার আরম্ভ, কিরপেই বা তাহার শেষ,—ইহার সকল কথাই বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে।

 ললিতবিস্তরে দেখিতে পাওয়া যায়, উক্ত গ্রন্থ রচিত হইবার সময়ে “বঙ্গলিপি” নামক পৃথক লিপি প্রচলিত ছিল। তাহা দ্বিসহস্র বৎসরের কথা। তখন “বঙ্গলিপি” স্বতন্ত্র লিপি বলিয়া পরিচিত ছিল; তাহাকে চেষ্টা করিয়া শিক্ষা করিতে হইত। বিশেষ পার্থক্য না থাকিলে, এরূপ হইত না।