পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০৪
কথা-চতুষ্টয়।

লাগিল। ওই বইখানা যে গিরিবালাকে বালিকা বলিয়া সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে তাহা যেন তাহার প্রত্যেক দুর্ব্বোধ পাতা দুষ্ট মানুষের মুখের মত আকার ধারণ করিয়া নীরবে প্রকাশ করিতে লাগিল। সেই বইখানা যদি কোন চোরে চুরি করিয়া লইয়া যাইত, তবে সেই চোরকে সে তাহার মাতৃভাণ্ডারের সমস্ত কেয়াখয়ের চুরি করিয়া পুরস্কার দিতে পারিত। সেই বইখানার বিনাশের জন্য সে মনে মনে দেবতার নিকট যে সকল অসঙ্গত ও অসম্ভব প্রার্থনা করিয়াছিল তাহা দেবতারা শুনেন নাই এবং পাঠকদিগকেও শুনাইবার কোন অবশ্যক দেখি না।

 তখন ব্যথিতহৃদয় বালিকা দুই একদিন চারুপাঠহস্তে গুরু গৃহে গমন বন্ধ করিল। এবং সেই দুই একদিন পরে এই বিচ্ছেদের ফল পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য সে অন্য ছলে শশিভূষণের গৃহসম্মুখবর্ত্তী পথে আসিয়া কটাক্ষপাত করিয়া দেখিল শশিভূষণ সেই কালো বইখানা ফেলিয়া একাকী দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া লোহার গরাদেগুলার প্রতি বিজাতীয় ভাষায় বক্তৃতা প্রয়োগ করিতেছেন। বোধ করি, বিচারকের মন কেমন করিয়া গলাইবেন এই লোহাগুলার উপর তাহার পরীক্ষা হইতেছে। সংসারে অনভিজ্ঞ, গ্রন্থবিহারী শশিভূষণের ধারণ ছিল যে, পুরাকালে ডিমস্থিনীস্‌, সিসিরো, বার্ক, শেরিডন্‌ প্রভৃতি বাগ্মীগণ বাক্যবলে যে সকল অসামান্য কার্য্য করিয়া গিয়াছেন; যেরূপ শব্দভেদী শরবর্ষণে