পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সমাপ্তি।
৭৩

বাল্য-অংশ যৌবন হইতে বিচ্যুত হইয়া পড়িল এবং মৃন্মায়ী বিস্মিত হইয়া ব্যথিত হইয়া চাহিয়া রহিল।

 মাতৃগৃহে তাহার সেই পুরাতন শয়ন-গৃহকে আর আপনার বলিয়া মনে হইল না, সেখানে যে থাকিত সে হঠাৎ আর নাই। এখন হৃদয়ের সমস্ত স্মৃতি সেই আর একটা বাড়ি আর একটা ঘর আর একটা শয্যার কাছে গুন্‌গুন্‌ করিয়া বেড়াইতে লাগিল।

 মৃন্ময়ীকে আর কেহ বাহিরে দেখিতে পাইল না। তাহার হাস্যধ্বনি আর শুনা যায় না। রাখাল তাহাকে দেখিলে ভয় করে। খেলার কথা মনেও আসে না।

 মৃন্ময়ী মাকে বলিল, “মা আমাকে শ্বশুর-বাড়ি রেখে আয়।”

 এদিকে, বিদায়কালীন পুত্রের বিষন্নমুখ স্মরণ করিয়া অপূর্ব্বর মার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যায়। সে যে রাগ করিয়া বৌকে বেহানের বাড়ি রাখিয়া আসিয়াছে ইহা তাঁহার মনে বড়ই বিঁধিতে লাগিল।

 হেনকালে একদিন মাথায় কাপড় দিয়া মৃন্ময়ী ম্লানমুখে শাশুড়ির পায়ের কাছে পড়িয়া প্রণাম করিল। শাশুড়ি তৎক্ষণাৎ ছলছলনেত্রে তাহাকে বক্ষে চাপিয়া ধরিলেন। মুহূর্ত্তের মধ্যে উভয়ের মিলন হইয়া গেল। শাশুড়ি বধূর মুখের দিকে চাহিয়া আশ্চর্য্য হইয়া গেলেন। সে মৃন্ময়ী আর নাই। এমন পরিবর্ত্তন সাধারণতঃ সকলের সম্ভব নহে। বৃহৎ পরিবর্ত্তনের জন্য বৃহৎ বলের আবশ্যক।