পাতা:কথা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
কথা

থেমে গেছে দুই তীরে; জনপদ-বাট
পান্থহীন। বটতলে পাষাণের ঘাট,
সেথায় বাঁধিল নৌকা স্নানাহারতরে
কর্ণধার। বনচ্ছায়া স্তব্ধ শব্দহীন;
অলস পতঙ্গ শুধু গুঞ্জে দীর্ঘ দিন;
পক্কশস্যগন্ধহরা মধ্যাহ্নের বায়ে
শ্যামার ঘোমটা যবে ফেলিল খসায়ে
অকস্মাৎ,—পরিপূর্ণ প্রণয়পীড়ায়
ব্যথিত ব্যাকুল বক্ষ – কণ্ঠরুদ্ধপ্রায়
বজ্রসেন কানে কানে কহিল শ্যামারে—
“ক্ষণিক শৃঙ্খল মুক্ত করিয়া আমারে
বাঁধিয়াছ অনন্ত শৃঙ্খলে। কি করিয়া
সাধিলে দুঃসাধ্য ব্রত কহ বিবরিয়া।
মাের লাগি কি করেছ জানি যদি প্রিয়ে,
পরিশােধ দিব তাহা এ জীবন দিয়ে
এই মাের পণ।”—বস্ত্র টানি মুখপরি
সে কথা এখনাে নহে—কহিল সুন্দরী।

গুটায়ে সােনার পাল সুদূরে নীরবে
দিনের আলােকতরী চলি গেল যবে
অস্তঅচলের ঘাটে,—তীর-উপবনে
লাগিল শ্যামার নৌকা সন্ধ্যার পবনে।
শুক্ল চতুর্থীর চন্দ্র অস্তগত প্রায়,—
নিস্তরঙ্গ শান্ত জলে সুদীর্ঘ রেখায়