পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কপালকুণ্ডলা।

য়তা পাইতেছে না—পাছে বাহির সমুদ্রে পড়িয়া অকূলে মারা যায়, এই আশঙ্কায় ভীত হইয়াছে।

 হিম নিবারণ জন্য সম্মুখে আবরণ দেওয়া ছিল, এজন্য নৌকার ভিতর হইতে আরোহিরা এ সকল বিষয় কিছুই জানিতে পারেন নাই। কিন্তু নব্য যাত্রী অবস্থা বুঝিতে পারিয়া বৃদ্ধকে সবিশেষ কহিলেন; তখন নৌকা মধ্যে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। যে কয়েকটী স্ত্রীলোক নৌকা মধ্যে ছিল, তন্মধ্যে কেহ কেহ কথার শব্দে জাগিয়াছিল; শুনিবামাত্র তাহারা আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিল। প্রাচীন কহিল, “কেনারায় পড়! কেনারায় পড়! কেনারায় পড়।”

 নব্য ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “কেনারা কোথা তাহা জানিতে পারিলে এত বিপদ্ হইবে কেন?”

 ইহা শুনিয়া নৌকারোহীদিগের আরও কোলাহল বৃদ্ধি হইল। নব্য যাত্রী কোন মতে তাহাদিগের স্থির করিয়া নাবিকদিগকে কহিলেন, “আশঙ্কার বিষয় কিছুই নাই, প্রভাত হইয়াছে—চারি পাঁচ দণ্ডের মধ্যে অবশ্য সূর্য্যোদয় হইবেক। চারি পাঁচ দণ্ডের মধ্যে নৌকা কদাচ মারা যাইবে না। তোমরা এক্ষণে বাহন বন্ধ কর, স্রোতে নৌকা যথায় যায় যাক্; পশ্চাৎ রৌদ্র হইলে পরামর্শ করা যাইবে।”

 নাবিকেরা এই পরামর্শে সম্মত হইয়া তদনুরূপ আচরণ করিতে লাগিল।

 অনেক ক্ষণ পর্য্যন্ত নাবিকেরা নিশ্চেষ্ট হইয়া রহিল।