পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চরণ তলে ।
১০৫

সীতে পরিপূর্ণ হইয়াছে। কক্ষ্যায় কক্ষ্যায় হর্ম্মসজ্জা অতি মনোহর। গন্ধদ্রব্য, গন্ধবারি, কুসুমদাম সর্ব্বত্র আমোদ করিতেছে। স্বর্ণ, রৌপ্য, গজদন্তাদি খচিত গৃহশোভার্থ নানা দ্রব্য সকল স্থানেই আলো করিতেছে। এইরূপ সজ্জীভূত এক কক্ষ্যায় লুৎফ্-উন্নিসা অধোবদনে বসিয়া আছেন; পৃথগাসনে নবকুমার বসিয়া আছেন। সপ্তগ্রামে নবকুমারের সহিত লুৎফ্-উন্নিসার আর দুই এক বার সাক্ষাৎ হইয়াছিল; তাহাতে লুৎফ্-উন্নিসার মনোরথ কতদূর সিদ্ধ হইয়াছিল তাহা অদ্যকার কথায় প্রকাশ হইবে।

 নবকুমার কিছু ক্ষণ নীরবে থাকিয়া কহিলেন, “তবে আমি এক্ষণে চলিলাম। তুমি আর আমাকে ডাকিও না।”

 লুৎফ্-উন্নিসা কহিল “যাইও না। আর একটু থাক। আমার যাহা বক্তব্য তাহা সমাপ্ত করি নাই।”

 নবকুমার আরও ক্ষণেক প্রতীক্ষা করিলেন, কিন্তু লুৎফ্-উন্নিসা কিছু বলিলেন না। ক্ষণেক পরে নবকুমার জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর কি বলিবে?” লুৎফ্-উন্নিসা কোন উত্তর করিলেন না—তিনি নীরবে রোদন করিতেছিলেন।

 নবকুমার ইহা দেখিয়া গাত্রোত্থান করিলেন; লুৎফ্ উন্নিসা তাঁহার বস্ত্রাগ্র ধৃত করিলেন। নবকুমার ঈষৎ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “কি বল না?”

 লুৎফ্-উন্নিসা কহিলেন “তুমি কি চাও? পৃথিবীতে কিছু কি প্রার্থনীয় নাই? ধন, সম্পদ, মান, প্রণয়, রঙ্গ,