পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাননতলে।
১২১

কপালকুণ্ডলা একাকিনী এক সঙ্কীর্ণ বন্য পথে ঔষধির সন্ধানে চলিলেন। যামিনী মধুরা, একান্ত শব্দমাত্রবিহীনা। মাধবী যামিনীর আকাশে স্নিগ্ধরশ্মিময় চন্দ্র নীরবে শ্বেত মেঘ খণ্ড সকল উত্তীর্ণ হইতেছে: পৃথিবীতলে, বন্য বৃক্ষ লতা সকল তদ্রূপ নীরবে শীতল চন্দ্রকরে বিশ্রাম করিতেছে; নীরবে বৃক্ষপত্র সকল সে কিরণের প্রতিঘাত করিতেছে; নীরবে লতা গুল্ম মধ্যে শ্বেত কুসুমদল বিকশিত হইয়া রহিয়াছে। পশু পক্ষী নীরব। কেবল কোথাও কদাচিৎ মাত্র ভগ্নবিশ্রাম কোন পক্ষীর পক্ষস্পন্দনশব্দ; কোথাও কচিৎ শুষ্কপত্রপাতশব্দ; কোথাও তলস্থ শুষ্কপত্র মধ্যে উরগ জাতীয় জীবের ক্বচিৎ গতিজনিত শব্দ; ক্বচিৎ অতি দূরস্থ কুক্কুররব। এমত নহে যে একেবারে বায়ু বহিতেছিল না; মধু মাসের দেহস্নিগ্ধকর বায়ু; অতিমন্দ; একান্ত নিঃশব্দ বায়ু মাত্র; তাহাতে কেবল মাত্র বৃক্ষের সর্ব্বাগ্রভাগারূঢ় পত্রগুলিন হেলিতেছিল, কেবলমাত্র আভূমিপ্রণত শ্যামালতা দুলিতেছিল; কেবল মাত্র নীলাম্বরসঞ্চারী ক্ষুদ্র শ্বেতাম্বুদখণ্ড গুলিন ধীরে ধীরে চলিতেছিল। কেবল মাত্র, তদ্রূপ বায়ু সংসর্গে সম্ভুক্ত পূর্ব্ব সুখের অস্পষ্ট স্মৃতি হৃদয়ে অল্প জাগরিত হইতেছিল।

 কপালকুণ্ডলার সেইরূপ পূর্ব্বস্মৃতি জাগরিত হইতেছিল; বালিয়াড়ীর শিখরে যে, সাগরবারিবিন্দুসংস্পৃষ্ট মলয়ানিল তাহার লম্বালকমণ্ডল মধ্যে ক্রীড়া করিত, তাহা মনে পড়িল; অমল নীলানন্ত গগণ প্রতি চাহিয়া দেখি-

১১