কপালকুণ্ডলা একাকিনী এক সঙ্কীর্ণ বন্য পথে ঔষধির সন্ধানে চলিলেন। যামিনী মধুরা, একান্ত শব্দমাত্রবিহীনা। মাধবী যামিনীর আকাশে স্নিগ্ধরশ্মিময় চন্দ্র নীরবে শ্বেত মেঘ খণ্ড সকল উত্তীর্ণ হইতেছে: পৃথিবীতলে, বন্য বৃক্ষ লতা সকল তদ্রূপ নীরবে শীতল চন্দ্রকরে বিশ্রাম করিতেছে; নীরবে বৃক্ষপত্র সকল সে কিরণের প্রতিঘাত করিতেছে; নীরবে লতা গুল্ম মধ্যে শ্বেত কুসুমদল বিকশিত হইয়া রহিয়াছে। পশু পক্ষী নীরব। কেবল কোথাও কদাচিৎ মাত্র ভগ্নবিশ্রাম কোন পক্ষীর পক্ষস্পন্দনশব্দ; কোথাও কচিৎ শুষ্কপত্রপাতশব্দ; কোথাও তলস্থ শুষ্কপত্র মধ্যে উরগ জাতীয় জীবের ক্বচিৎ গতিজনিত শব্দ; ক্বচিৎ অতি দূরস্থ কুক্কুররব। এমত নহে যে একেবারে বায়ু বহিতেছিল না; মধু মাসের দেহস্নিগ্ধকর বায়ু; অতিমন্দ; একান্ত নিঃশব্দ বায়ু মাত্র; তাহাতে কেবল মাত্র বৃক্ষের সর্ব্বাগ্রভাগারূঢ় পত্রগুলিন হেলিতেছিল, কেবলমাত্র আভূমিপ্রণত শ্যামালতা দুলিতেছিল; কেবল মাত্র নীলাম্বরসঞ্চারী ক্ষুদ্র শ্বেতাম্বুদখণ্ড গুলিন ধীরে ধীরে চলিতেছিল। কেবল মাত্র, তদ্রূপ বায়ু সংসর্গে সম্ভুক্ত পূর্ব্ব সুখের অস্পষ্ট স্মৃতি হৃদয়ে অল্প জাগরিত হইতেছিল।
কপালকুণ্ডলার সেইরূপ পূর্ব্বস্মৃতি জাগরিত হইতেছিল; বালিয়াড়ীর শিখরে যে, সাগরবারিবিন্দুসংস্পৃষ্ট মলয়ানিল তাহার লম্বালকমণ্ডল মধ্যে ক্রীড়া করিত, তাহা মনে পড়িল; অমল নীলানন্ত গগণ প্রতি চাহিয়া দেখি-
১১