উত্তর করিতে পারিলেন না। ব্রাহ্মণবেশী কপালকুণ্ডলাকে নিরুত্তরা দেখিয়া গাম্ভীর্য্যের সহিত কহিলেন, “কপালকুণ্ডলা! তুমি রাত্রে এ নিবিড় বন মধ্যে কি জন্য আসিয়াছ?”
অজ্ঞাত রাত্রিচর পুরুষের মুখে আপন নাম শুনিয়া কপালকুণ্ডলা অবাক হইলেন, কিছু ভীতও হইলেন। সুতরাং সহসা কোন উত্তর তাঁহার মুখ হইতে বাহির হইল না।
ব্রাহ্মণবেশী পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলেন “তুমি আমাদিগের কথা বার্তা শুনিয়াছ?”
সহসা কপালকুণ্ডলা বাক্শক্তি পুনঃপ্রাপ্ত হইলেন। তিনি উত্তর না দিয়া কহিলেন “আমিও তাহাই জিজ্ঞাসা করিতেছি। এ কানন মধ্যে তোমরা দুই জনে এ নিশীথে কি কুপরামর্শ করিতেছিলে?”
ব্রাহ্মণ কিছু কাল নিরুত্তরে চিন্তামগ্ন হইয়া রহিলেন। যেন কোন নূতন ইষ্টসিদ্ধির উপায় তাঁহার চিত্ত মধ্যে আসিয়া উপস্থিত হইল। তিনি কপালকুণ্ডলার হস্তধারণ করিলেন এবং হস্ত ধরিয়া ভগ্ন গৃহ হইতে কিছু দূরে লইয়া যাইতে লাগিলেন। কপালকুণ্ডলা অতি ক্রোধে হস্ত মুক্ত করিয়া লইলেন। ব্রাহ্মণবেশী অতি মৃদুম্বরে কপালকুণ্ডলার কাণের কাছে কহিলেন,
“চিন্তা কি? আমি পুরুষ নহি।”
কপালকুণ্ডলা আরও চমৎকৃতা হইলেন। এ কথায় তাঁহার কতক বিশ্বাস হইল, সম্পূর্ণ বিশ্বাসও হইল না।