পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
কপালকুণ্ডলা।

কাদম্বিনী আসিয়া আকাশ ব্যাপিয়া ফেলিল। আর সমুদ্রে দিক্ নিরূপণ হয় না। নাবিকেরা তরি ফিরাইল। কোন্ দিকে বাহিবে স্থিরতা পায় না। তাহারা গীত বন্ধ করিল, গলার মালা সকল ছিড়িয়া ফেলিল; বসন্ত রঙ্গের পতাকা আপনি খসিয়া জলে পড়িয়া গেল। বাতাস উঠিল, বৃক্ষপ্রমাণ তরঙ্গ উঠিতে লাগিল, তরঙ্গমধ্য হইতে এক জন জটাজূটধারী প্রকাণ্ডাকার পুৰুষ আসিয়া কপালকুণ্ডলার নৌকা বামহস্তে তুলিয়া সমুদ্র মধ্যে প্রেরণ করিতে উদ্যত হইল। এমত সময়ে সেই ভীমকান্ত শ্রীময় ব্রাহ্মণবেশধারী আসিয়া তরি ধরিয়া রহিল। সে কপালকুণ্ডলাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমায় রাখি কি নিমগ্ন করি?” অকস্মাৎ কপালকুণ্ডলার মুখ হইতে বাহির হইল “নিমগ্ন কর।” ব্রাহ্মণবেশী নৌকা ছাড়িয়া দিল। তখন নৌকাও শব্দময়ী হইল, কথা কহিয়া উঠিল। নৌকা কহিল “আমি আর এ ভার বহিতে পারি না, আমি পাতালে প্রবেশ করি। ইহা কহিয়া নৌকা তাহাকে জলে নিক্ষিপ্ত করিয়া পাতালে প্রবেশ করিল।

 ঘর্ম্মাক্তকলেবরা হইয়া কপালকুণ্ডলা স্বপ্নোত্থিতা হইলে চক্ষুৰুন্মীলন করিলেন, দেখিলেন, প্রভাত হইয়াছে—কক্ষ্যার গবাক্ষ মুক্ত রহিয়াছে; তন্মধ্য দিয়া বসন্তবায়ুস্রোতঃ প্রবেশ করিতেছে। মন্দান্দোলিত বৃক্ষশাক্ষায় পক্ষিগণ কূজন করিতেছে। সেই গবাক্ষের উপর কতক গুলিন মনোহর বন্যলতা সুবাসিত কুসুম