পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
কপালকুণ্ডলা।

 “প্রথমতঃ আত্মপরিচয় দিই। কত দূর আমার কথা বিশ্বাসযোগ্য তাহা আপনি বিবেচনা করিয়া লইতে পারিবা। যখন তুমি স্বামীর সঙ্গে হিজলী প্রদেশ হইতে আসিতেছিলে, তখন পথিমধ্যে রজনীযোগে এক যবনকন্যার সহিত সাক্ষাৎ হয়। তোমার কি তাহা মনে পড়ে?”

 কপালকুণ্ডলা কহিলেন, “যিনি আমাকে অলঙ্কার দিয়াছিলেন?”

 ব্রাহ্মণবেশধারিণী কহিলেন “আমিই সেই।”

 কপালকুণ্ডলা অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন। লুৎফ্-উন্নিসা তাঁহার বিস্ময় দেখিয়া কহিলেন, “আরও বিস্ময়ের বিষয় আছে—আমি তোমার সপত্নী।”

 কপালকুণ্ডলা চমৎকৃতা হইয়া কহিলেন, “সে কি?” লুৎফ্-উন্নিসা তখন আনুপূর্ব্বিক আত্মপরিচয় দিতে লাগিলেন। বিবাহ, জাতিভ্রংস, স্বামী কর্ত্তৃক ত্যাগ, ঢাকা, আগ্রা, জাঁহাগীর, মেহেরউন্নিসা, আগ্রা ত্যাগ, সপ্তগ্রামে বাস, নবকুমারের সহিত সাক্ষাৎ, নবকুমারের ব্যবহার, গত দিবস প্রদোষে ছদ্মবেশে কাননে আগমন, হোমকারীর সহিত সাক্ষাৎ, সকলই বলিলেন। এই সময় কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন,

 “তুমি কি অভিপ্রায়ে আমাদিগের বাটীতে ছদ্মবেশে আসিতে বাসনা করিয়াছিলে?”

 লুৎফ্-উন্নিসা কহিলেন “তোমার সহিত স্বামীর চিরবিচ্ছেদ জন্মাইবার অভিপ্রায়ে।”