পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপত্নীসম্ভাষে।
১৪৯

হইত, তবে মনুষ্যের দুঃখস্রোত শমিত কি বর্দ্ধিত হইত তাহা কে বলিবে? লোকে বলিয়া থাকে সংসাররচনা অপূর্ব্ব কৌশলময়।

 নবকুমার দেখিলেন কপালকুণ্ডলা আলুলায়িতকুন্তলা; যখন কপালকুণ্ডলা তাঁহার হয় নাই তখনই সে কুন্তল বাঁধিত না। আবার দেখিলেন যে সেই কুন্তলরাশি আসিয়া ব্রাহ্মণকুমারের পৃষ্ঠদেশে পড়িয়া তাঁহার অংসসম্বিলম্বী কেশদামের সহিত মিশিয়াছে। কপালকুণ্ডলার কেশরাশি ঈদৃশ আয়তনশালী এবং লঘু স্বরে কথোপকথনের প্রয়োজনে উভয়ে এরূপ সন্নিকটবর্তী হইয়া বসিয়াছিলেন, যে লুৎফ-উন্নিসার পৃষ্ঠ পর্য্যন্ত কপালকুণ্ডলার কেশের সম্প্রসারণ কেহই দেখিতে পায়েন নাই। দেখিয়া, নবকুমার ধীরে ভূতলে বসিয়া পড়িলেন।

 কাপালিক ইহা দেখিয়া নিজ কটিবিলম্বী এক নারিকেলপাত্র বিমুক্ত করিয়া কহিলেন, “বৎস! বল হারাইতেছ, এই মহৌষধ পান কর; ইহা ভবানীর প্রসাদ। পান করিয়া বল পাইবে।”

 কাপালিক পাত্র নবকুমারের মুখের নিকট ধরিল। তিনি অন্যমনে পান করিয়া দারুণ তৃষা নিবারণ করিলেন। নবকুমার জানিতেন না যে এই সুস্বাদ পেয় কাপালিকের স্বহস্তপ্রস্তুত প্রচণ্ড তেজস্বিনী সুরা। পান করিবামাত্র কিছু সবল হইলেন।

 এ দিকে লুৎফ-উন্নিসা পূর্ব্ববৎ মৃদু স্বরে কপালকুণ্ডলাকে কহিতে লাগিলেন,