সেই জগৎশাসনকর্ত্রী, সুখদুঃখবিধায়িনী কৈবল্যদায়িনী ভৈরবী স্বপ্নে তাঁহার জীবন সমর্পণ আদেশ করিয়াছেন। কেনই বা কপালকুণ্ডলা সে আদেশ পালন না করিবেন?
তুমি আমি প্রাণ ত্যাগ করিতে চাহি না। রাগ করিয়া যাহা বলি, এ সংসার সুখময়। সুখের প্রত্যাশাতেই বর্ত্তুলবৎ সংসার মধ্যে ঘুরিতেছি—দুঃখের প্রত্যাশায় নহে। কদাচিৎ যদি আত্মকর্ম্মদোষে সেই প্রত্যাশা সফলীকৃত না হয়, তবেই দুঃখ বলিয়া উচ্চ কলরব আরম্ভ করি। তাহা হইলেই দুঃখ নিয়ম নহে সিদ্ধান্ত হইল; নিয়মের ব্যতিক্রম মাত্র। তোমার আমার সর্ব্বত্র সুখ। সেই সুখে আমরা সংসার মধ্যে বদ্ধমূল; ছাড়িতে চাহি না। কিন্তু এ সংসারবন্ধনে প্রণয় প্রধান রজ্জু। কপালকুণ্ডলার সে বন্ধন ছিল না—কোন বন্ধনই ছিল না। তবে কপালকুণ্ডলাকে কে রাখে?
যাহার বন্ধন নাই; তাহারই অপ্রতিহত বেগ। গিরিশিখর হইতে নির্ঝরিণী নামিলে কে তাহার গতিরোধ করে? এক বার বায়ু তাড়িত হইলে কে তাহার সঞ্চারণ নিবারণ করে? কপালকুণ্ডলার চিত্ত চঞ্চল হইলে কে তাহার স্থিতিস্থাপন করিবে? নবীন করিকরভ মাতিলে কে তাহাকে শান্ত করিবে?
কপালকুণ্ডলা আপন চিত্তকে জিজ্ঞাসা করিলেন “কেনই বা এ শরীর জগদীশ্বরীর চরণে সমর্পণ না করিব? পঞ্চ ভূত লইয়া কি হইবে?” প্রশ্ন করিতেছিলেন অথচ কোন নিশ্চিত উত্তর দিতে পারিতেছিলেন