পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৬২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৬
কপালকুণ্ডলা।

হইয়া অগাধ জলে পড়িয়া যাইত। পূজাস্থানে দীপ নাই—কাষ্ঠখণ্ড মাত্রে অগ্নি জ্বলিতেছিল, তদালোকে অতি অস্পষ্টদৃষ্ট শ্মশানভূমি আরও ভীষণ দেখাইতেছিল। নিকটে পূজা হোম বলি প্রভৃতির সমগ্র আয়োজন ছিল। বিশাল তরঙ্গিণী হৃদয় অন্ধকারে বিস্তৃত হইয়া রহিয়াছে। চৈত্র মাসের বায়ু অপ্রতিহত বেগে গঙ্গাহৃদয়ে প্রধাবিত হইতেছিল; তাহার কারণে তরঙ্গাভিঘাতজনিত কলকল রব গগন ব্যাপ্ত করিতেছিল। শ্মশানভূমিতে শবভুক্ পশুগণ কর্কশ কণ্ঠে ক্বচিৎ ধ্বনি করিতেছিল। কপালকুণ্ডলা মানস চক্ষে সেই প্রেতভূমিতে কত প্রেতিনীকে নরদেহ চর্ব্বণ করিতে দেখিতে লাগিলেন; কত পিশাচীকে কর্দ্দমোপরে সশব্দে নাচিয়া বেড়াইতে শুনিতে লাগিলেন।

 কাপালিক উভয়কে উপযুক্ত স্থানে কুশাসনে উপবেশন করাইয়া তন্ত্রাদির বিধানানুসারে পূজারম্ভ করিলেন। উপযুক্ত সময়ে নবকুমারের প্রতি আদেশ করিলেন যে কপালকুণ্ডলাকে স্নাত করিয়া আন। নবকুমার কপালকুণ্ডলার হস্ত ধারণ করিয়া শ্মশানভূমির উপর দিয়া স্নান করাইতে লইয়া চলিলেন। তাঁহাদিগের চরণে অস্থি ফুটিতে লাগিল। নবকুমারের জানুর আঘাতে একটা জলপূর্ণ শ্মশানকলস ভগ্ন হইয়া গেল। তাহার নিকটেই শব পড়িয়াছিল—হতভাগার কেহ সৎকারও করে নাই। দুই জনেরই তাহাতে পদ স্পর্শ হইল। কপালকুণ্ডলা তাহাকে বেড়িয়া গেলেন, নবকুমার তাহাকে চরণে দলিত করিয়া গেলেন। চতুর্দ্দিক্ বেড়িয়া শব-