পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
কপালকুণ্ডলা।

নাই, আহার্য্য নাই, পেয় নাই; নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক; অথচ ক্ষুধা তৃষ্ণার তাঁহার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছিল। একে দুরন্ত শীত নিবারণ জন্য আশ্রয় নাই, গাত্রবস্ত্র পর্য্যন্ত নাই। এই তুষার-শীতল-বায়ু-সঞ্চারিত-নদীতীরে, হিমবর্ষী আকাশতলে, নিরাশ্রয়ে, নিরাবরণে শয়ন করিয়া থাকিতে হইবেক। হয়ত, রাত্রি মধ্যে ব্যাঘ্র ভল্লুকে প্রাণ নাশ করিবেক। অদ্য না করে কল্য করিবে। প্রাণনাশই নিশ্চিত।

 মনের চাঞ্চল্য হেতু নবকুমার একস্থানে অধিক ক্ষণ বসিয়া থাকিতে পারিলেন না। তীর ত্যাগ করিয়া উপরে উঠিলেন। ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। ক্রমে অন্ধকার হইল। শিশিরাকাশে নক্ষত্রমণ্ডলী নীরবে ফুটিতে লাগিল, যেমন নবকুমারের স্বদেশে ফুটিতে থাকে তেমনি ফুটিতে লাগিল। অন্ধকারে সর্ব্বত্র জনহীন;—আকাশ, প্রান্তর, সমুদ্র।—সর্ব্বত্র নীরব, কেবল অবিরল-কল্লোলিত সমুদ্রগর্জ্জন আর কদাচিৎ বন্য পশুর রব। তথাপি সেই অন্ধকারে, শীতবর্ষী আকাশতলে, বালুকাস্তূপের চতুঃপার্শ্বে, ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কখন উপত্যকায়, কখন অধিত্যকায়, কখন স্তূপতলে, কখন স্তূপশিখরে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। চলিতে চলিতে প্রতিপদে হিংস্র পশু কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইবার সম্ভাবনা। কিন্তু এক স্থানে বসিয়া থাকিলেও সেই আশঙ্কা।

 ভ্রমণ করিতে করিতে নবকুমারের শ্রম জন্মিল। সমস্ত