পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্তূপশিখরে।
১৭

তেছিল—নবকুমারকে প্রথম দেখিতে পাইল না। নবকুমার দেখিলেন তাহার বয়ঃক্রম প্রায় পঞ্চাশৎ বৎসর হইবেক। পরিধানে কোন কার্পাসবস্ত্র আছে কি না তাহা লক্ষ্য হইল না; কটিদেশ হইতে জানু পর্য্যন্ত শার্দ্দূলচর্ম্মে আবৃত। গলদেশে ৰুদ্রাক্ষমালা; আয়ত মুখমণ্ডল শ্মশ্রুজটা পরিবেষ্টিত। সম্মুখে কাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছিল—সেই অগ্নির দীপ্তি লক্ষ্য করিয়া নবকুমার সে স্থলে আসিতে পারিয়া ছিলেন। নবকুমার একটা বিকট দুর্গন্ধ পাইতে লাগিলেন; ইহার আসন প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া তাহার কারণ অনুভূত করিতে পারিলেন। জটাধারী এক ছিন্ন-শীর্ষ গলিত শবের উপর বসিয়া আছেন। আরও সভয়ে দেখিলেন যে সম্মুখে নরকপাল রহিয়াছে; তন্মধ্যে রক্তবর্ণ দ্রব পদার্থ রহিয়াছে। চতুর্দ্দিকে স্থানে স্থানে অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে—এমন কি যোগাসীনের কণ্ঠস্থ ৰুদ্রাক্ষমালা মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্থিখণ্ড গ্রথিত রহিয়াছে। নবকুমার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া রহিলেন। অগ্রসর হইবেন কি স্থানত্যাগ করিবেন তাহা বুঝিতে পারিলেন না। তিনি কাপালিকদিগের কথা শ্রুত ছিলেন। বুঝিলেন, যে এ ব্যক্তি দুরন্ত কাপালিক।

 যখন নবকুমার উপনীত হইয়াছিলেন, তখন কাপালিক মন্ত্র সাধনে বা জপে বা ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, নবকুমারকে দেখিয়া ভ্রূক্ষেপও করিলেন না। অনেক ক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিলেন “কস্ত্বং” নবকুমার কহিলেন “ব্রাহ্মণ”।