পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
কপালকুণ্ডলা।

 সৈকতের মধ্যস্থানে নীত হইয়া নবকুমার দেখিলেন পূর্ব্ব দিনের ন্যায় তথায় বৃহৎকাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছে। চতুঃপার্শ্বে তান্ত্রিকপূজার আয়োজন রহিয়াছে, তন্মধ্যে নরকপালপূর্ণ আসব রহিয়াছে—কিন্তু শব নাই। অনুমান করিলেন তাঁহাকেই শব হইতে হইবে।

 কতকগুলিন শুষ্ক কঠিন লতাগুল্ম তথায় পূর্ব্বেই আহরিত ছিল। কাপালিক তদ্দ্বারা নবকুমারকে দৃঢ়তর বন্ধন করিতে আরম্ভ করিলেন। নবকুমার সাধ্যমত বলপ্রকাশ করিলেন। কিন্তু বলপ্রকাশ কিছুমাত্র ফলদায়ক হইল না। তাহার প্রতীতি হইল যে এ বয়সেও কাপালিক মত্ত হস্তীর বল ধারণ করে। নবকুমারের বল প্রকাশ দেখিয়া কাপালিক কহিল।

 “মূর্খ! কি জন্য বলপ্রকাশ কর! তোমার জন্ম আজি সার্থক হইল। ভৈরবীর পূজায় তোমার এই মাংস পিণ্ড অর্পিত হইবেক, ইহার অধিক তোমার তুল্য লোকের আর কি সৌভাগ্য হইতে পারে?”

 কাপালিক নবকুমারকে দৃঢ়তর বন্ধন করিয়া সৈকতোপরি ফেলিয়া রাখিলেন। এবং বধের প্রাক্কালিক পূজাদি ক্রিয়ায় ব্যাপৃত হইলেন।

 শুষ্ক লতা অতি কঠিন—বন্ধন অতিদৃঢ়—মৃত্যু আসন্ন! নবকুমার ইষ্টদেবচরণে চিত্ত নিবিষ্ট করিলেন। এক বার জন্মভূমি মনে পড়িল; নিজ সুখের আলয় মনে পড়িল, এক বার বহুদিন অন্তর্হিত জনক এবং জননীর মুখ মনে পড়িল, দুই এক বিন্দু অশ্রুজল সৈকত বালুকায় শুষিয়া