পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
কপালকুণ্ডলা।

তদ্বর্ত্মসম্বর্ত্তী হওয়া ব্যতীত তাঁহার অন্য উপায় নাই। কিন্তু অন্ধকারে বন মধ্যে রমণীকে সকল সময় দেখা যায় না; যুবতী এক দিকে ধাবমানা হইলে, নবকুমার অন্য দিকে যান; রমণী কহিলেন, “আমার অঞ্চল ধর।” নবকুমার তাঁহার অঞ্চল ধরিয়া চলিলেন। ক্রমে তাঁহারা পাদক্ষেপ মন্দ করিয়া চলিতে লাগিলেন। অন্ধকারে কিছুই লক্ষ্য হয় না; কেবল কখন কোথায় নক্ষত্রালোকে কোন বালুকাস্তূপের শুভ্র শিখর অস্পষ্ট দেখা যায়—কোথাও খদ্যোতমালাসম্বৃত বৃক্ষের অবয়ব জ্ঞানগোচর হয়।

 কপালকুণ্ডলা পথিককে সমভিব্যাহারে লইয়া, নিভৃত কাননাভ্যন্তরে উপনীত হইলেন। তখন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর। সম্মুখে অন্ধকারে বন মধ্যে এক অত্যুচ্চ দেবালয়চূড়া লক্ষিত হইল; তন্নিকটে ইষ্টকনির্ম্মিতপ্রাচীরবেষ্টিত একটি গৃহও দেখা গেল। কপালকুণ্ডলা প্রাচীর দ্বারের নিকটস্থ হইয়া তাহাতে করাঘাত করিতে লাগিলেন; পুনঃ পুনঃ করাঘাত করাতে ভিতর হইতে এক ব্যক্তি কহিল, “কেও কপালকুণ্ডলা বুঝি?” কপালকুণ্ডলা কহিলেন, “দ্বার খোল।”

 উত্তরকারী আসিয়া দ্বার খুলিয়া দিল। যে ব্যক্তি দ্বার খুলিয়া দিলেক, সে ঐ দেবালয়াধিষ্ঠাত্রী দেবতার সেবক বা অধিকারী; বয়সে পঞ্চাশৎ বৎসর অতিক্রান্ত করিয়াছিল। কপালকুণ্ডলা তাহার বিরলকেশমস্তক কর দ্বারা আকর্ষিত করিয়া আপন অধরের নিকট তাহার