পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৫৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
কপালকুণ্ডলা।

ভাস্করাচার্য্য যদি জানিতেন যে, তাঁহার একমাত্র কন্যা চিরবিধবা হইবে, তবে তিনি কখন দারপরিগ্রহ করিতেন না। নবকুমার বা তাঁহার নূতন পত্নী যদি জানিতেন, যে তাঁহাদিগের বিবাহে কি ফলোৎপত্তি হইবে, তবে কখন তাঁহাদিগের বিবাহ হইত না।

 নবকুমার মেদিনীপুরে আসিয়া অধিকারীর দানকৃত ধনবলে কপালকুণ্ডলার জন্য এক জন দাসী, এক জন রক্ষক ও শিবিকাবাহক নিযুক্ত করিয়া, তাঁহাকে শিবিকারোহণে পাঠাইলেন। অর্থের অপ্রাচুর্য্য হেতুক স্বয়ং পদব্রজে চলিলেন। নবকুমার পূর্ব্ব দিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত ছিলেন, মধ্যাহ্ন ভোজনের পর বাহকেরা তাঁহাকে অনেক পশ্চাৎ করিয়া গেল। ক্রমে সন্ধ্যা হইল। শীত কালের অনিবিড় মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন হইয়াছে। সন্ধ্যাও অতীত হইল। পৃথিবী অন্ধকারময়ী হইল। অল্প অল্প বৃষ্টিও পড়িতে লাগিল। নবকুমার কপালকুণ্ডলার সহিত একত্র হইবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। মনে মনে স্থির জ্ঞান ছিল, যে প্রথম সরাইতে তাঁহার সাক্ষাৎ পাইবেন, কিন্তু সরাইও আপাততঃ দেখা যায় না। প্রায় রাত্রি চারি ছয় দণ্ড হইল। নবকুমার দ্রুত পাদ বিক্ষেপ করিতে করিতে চলিলেন। অকস্মাৎ কোন কঠিন দ্রব্যে তাঁহার চরণ স্পর্শ হুইল। পদভরে সে বস্তু খড় খড় মড় মড় শব্দে ভাঙ্গিয়া গেল। নবকুমার দাঁড়াইলেন; পুনর্ব্বার পদ চালনা করিলেন; পুনর্ব্বার ঐরূপ হইল। পদসৃষ্ট বস্তু হস্তে করিয়া তুলিয়া লইলেন। দেখিলেন, ঐ বস্তু তক্তাভাঙ্গার মত।