পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৬১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পান্থনিবাসে।
৫৫

দর্পণস্থ ছায়ার ন্যায় রূপবতী।” তাহা হইলে রূপ বর্ণনার এক শেষ হইত। দুর্ভাগ্যবশতঃ ইনি সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী নহেন, সুতরাং নিরস্ত হইতে হইল।

 ইনি যে নির্দ্দোষ সুন্দরী নহেন তাহা বলিবার কারণ এই যে, প্রথমতঃ ইহার শরীর মধ্যমাকৃতির অপেক্ষা কিঞ্চিৎ দীর্ঘ; দ্বিতীয়তঃ অধরৌষ্ঠ কিছু চাপা; তৃতীয়তঃ প্রকৃত পক্ষে ইনি গৌরাঙ্গিণী নহেন।

 শরীর ঈষদ্দীর্ঘ বটে, কিন্তু হস্তপদ হৃদয়াদি সর্ব্বাঙ্গ সুগোল এবং সম্পূর্ণীভূত। বর্ষাকালে বিটপীলতা যেমন আপন পত্ররাশির বাহুল্যে দলমল করে, ইহার শরীর তেমনি আপন পূর্ণতায় দলমল করিতেছিল; সুতরাং ঈষদ্দীর্ঘ দেহও পূর্ণতাহেতুক অধিকতর শোভার কারণ হইয়াছিল। যাহাদিগকে প্রকৃতপক্ষে গৌরাঙ্গিণী বলি, তাঁহাদিগের মধ্যে কাহারও বর্ণ পূর্ণচন্দ্র কৌমুদীর ন্যায়, কাহারও কাহারও ঈষদারক্তবদনা উষার ন্যায়। ইহার এতদুভয়বর্জ্জিত, সুতরাং ইহাকে প্রকৃত গৌরাঙ্গিণী বলিলাম না বটে, কিন্তু মুগ্ধকরী শক্তিতে ইহার বর্ণ ন্যূন নহে। ইনি শ্যামবর্ণা। “শ্যামা মা” বা “শ্যামসুন্দর” যে শ্যামবর্ণের উদাহরণ এ সে শ্যামবর্ণ নহে। তপ্ত কাঞ্চনের যে শ্যামবর্ণ এ সেই শ্যাম। পূর্ণচন্দ্রকরলেখা, অথবা হেমাম্বুদকিরিটিনী উষা, যদি গৌরাঙ্গিণীদিগের বর্ণপ্রতিমা হয়, তবে বসন্তপ্রসূত নবচূতদলরাজির শোভা এই শ্যামার বর্ণের অনুরূপ বলা যাইতে পারে। পাঠক মহাশয়দিগের মধ্যে অনেকে গৌরাঙ্গিণীর বর্ণের প্রতিষ্ঠা করিতে