ভরা নদী। ভাদ্র মাসের নদীজলের ন্যায়, ইহার রূপরাশি টলটল করিতেছিল—উছলিয়া পড়িতেছিল। বর্ণাপেক্ষা, নয়নাপেক্ষা, সর্ব্বাপেক্ষা, সেই সৌন্দর্য্যের পারিপ্লব মুগ্ধকর। পূর্ণযৌবনভরে সর্ব্ব শরীর সতত ঈষচ্চঞ্চল; বিনা বায়ুতে নব শরতের নদী যেমন ঈষচ্চঞ্চল, তেমনি চঞ্চল; সে চাঞ্চল্য মুহুর্ম্মুহু নূতন নূতন শোভাবিকাশের কারণ। নবকুমার নিমেষশূন্য চক্ষে সেই নূতন নূতন শোভা দেখিতেছিলেন।
সুন্দরী, নবকুমারের চক্ষু নিমেষশূন্য দেখিয়া কহিলেন, “আপনি কি দেখিতেছেন?”
নবকুমার ভদ্রলোক; অপ্রতিভ হইয়া মুখাবনত করিলেন। নবকুমারকে নিৰুত্তর দেখিয়া অপরিচিতা পুনরপি হাসিয়া কহিলেন,
“আপনি কখন কি স্ত্রীলোক দেখেন নাই, না আপনি আমাকে বড় সুন্দরী মনে করিতেছেন?”
সহজে এ কথা কহিলে, তিরস্কার স্বরূপ বোধ হইত, কিন্তু রমণী যে হাসির সহিত বলিলেন, তাহাতে ব্যঙ্গ ব্যতীত আর কিছুই বোধ হইল না। নবকুমার দেখিলেন, এ অতি মুখরা; মুখরার কথায় কেন না উত্তর করিবেন? কহিলেন,
“আমি স্ত্রীলোক দেখিয়াছি; কিন্তু এরূপ সুন্দরী দেখি নাই।”
রমণী সগর্ব্বে জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটীও না?”
নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণ্ডলার রূপ জাগিতেছিল;