পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পান্থনিবাসে।
৫৭

ভরা নদী। ভাদ্র মাসের নদীজলের ন্যায়, ইহার রূপরাশি টলটল করিতেছিল—উছলিয়া পড়িতেছিল। বর্ণাপেক্ষা, নয়নাপেক্ষা, সর্ব্বাপেক্ষা, সেই সৌন্দর্য্যের পারিপ্লব মুগ্ধকর। পূর্ণযৌবনভরে সর্ব্ব শরীর সতত ঈষচ্চঞ্চল; বিনা বায়ুতে নব শরতের নদী যেমন ঈষচ্চঞ্চল, তেমনি চঞ্চল; সে চাঞ্চল্য মুহুর্ম্মুহু নূতন নূতন শোভাবিকাশের কারণ। নবকুমার নিমেষশূন্য চক্ষে সেই নূতন নূতন শোভা দেখিতেছিলেন।

 সুন্দরী, নবকুমারের চক্ষু নিমেষশূন্য দেখিয়া কহিলেন, “আপনি কি দেখিতেছেন?”

 নবকুমার ভদ্রলোক; অপ্রতিভ হইয়া মুখাবনত করিলেন। নবকুমারকে নিৰুত্তর দেখিয়া অপরিচিতা পুনরপি হাসিয়া কহিলেন,

 “আপনি কখন কি স্ত্রীলোক দেখেন নাই, না আপনি আমাকে বড় সুন্দরী মনে করিতেছেন?”

 সহজে এ কথা কহিলে, তিরস্কার স্বরূপ বোধ হইত, কিন্তু রমণী যে হাসির সহিত বলিলেন, তাহাতে ব্যঙ্গ ব্যতীত আর কিছুই বোধ হইল না। নবকুমার দেখিলেন, এ অতি মুখরা; মুখরার কথায় কেন না উত্তর করিবেন? কহিলেন,

 “আমি স্ত্রীলোক দেখিয়াছি; কিন্তু এরূপ সুন্দরী দেখি নাই।”

 রমণী সগর্ব্বে জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটীও না?”

 নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণ্ডলার রূপ জাগিতেছিল;