পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
কপালকুণ্ডলা।

ভয়ানক উচ্চ নহে; এখন একতালায় সেরূপ উচ্চতা অনেক দেখা যায়।

 এই গৃহের সৌধোপরি দুইটী নবীনবয়সী স্ত্রীলোক দাঁড়াইয়া চতুর্দ্দিক্ অবলোকন করিতে ছিলেন। সন্ধ্যাকাল উপস্থিত। চতুর্দ্দিকে যাহা দেখা যাইতেছিল, তাহা লোচনরঞ্জন বটে। নিকটে একদিকে, নিবিড়বন; তন্মধ্যে অসংখ্য পক্ষীগণ কলরব করিতেছে। অন্যদিকে ক্ষুদ্র খাল, রূপার সূতার ন্যায় পড়িয়া রহিয়াছে। দূরে, মহানগরীর অসংখ্য সৌধমালা, নববসন্তপবনস্পর্শলোলুপ নাগরিকগণে পরিপূরিত হইয়া শোভা করিতেছে। অন্যদিকে, অনেকদূরে নৌকাভরণা ভাগীরথীর বিশালবক্ষে সন্ধ্যাতিমির ক্ষণে ক্ষণে গাঢ়তর হইতেছে।


 যে নবীনাদ্বয় প্রাসাদোপরি দাঁড়াইয়াছিলেন, তন্মধ্যে এক জন চন্দ্ররশ্মিবর্ণাভা, অবিন্যস্ত কেশভার মধ্যে প্রায় অর্দ্ধলুক্কায়িত। অপরা কৃষ্ণাঙ্গিনী; তিনি সুমুখী, ষোড়শী; তাঁহার ক্ষুদ্র দেহ, মুখখানি ক্ষুদ্র; তাহার উপরার্দ্ধে চারিদিক্ দিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুঞ্চিত কুন্তলদাম বেড়িয়া পড়িয়াছে; যেন নীলোৎপল-দল রাজি উৎপলমধ্যকে ঘেরিয়া রহিয়াছে। নয়নযুগল বিস্ফারিত, কোমল-শ্বেতবর্ণ, সফরী সদৃশ; অঙ্গুলি গুলিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, সঙ্গিনীর কেশতরঙ্গ মধ্যে ন্যস্ত হইয়াছে। পাঠক মহাশয় বুঝিয়াছেন, যে চন্দ্ররশ্মিবর্ণশোভিনী কপালকুণ্ডলা; তাঁহাকে বলিয়া দিই, কৃষ্ণাঙ্গিনী তাঁহার ননন্দা শ্যামা সুন্দরী।