পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাগরসঙ্গমে।

 বৃদ্ধ কহিলেন, “তবে তুমি এলে কেন?”

 যুবা উত্তর করিলেন, “আমি ত আগেই বলিয়াছি, যে সমুদ্র দেখিব বড় সাদ ছিল, সেই জন্যই আসিয়াছি।” পরে অপেক্ষাকৃত মৃদুস্বরে কহিতে লাগিলেন, “আহা! কি দেখিলাম! জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না!

‘দূরাদয়শ্চক্রনিভস্য তন্বী
তমালতালীবনরাজিনীলা।
আভাতি বেলা লবণাম্বুরাশে-
র্দ্ধারানিবন্ধেব কলঙ্করেখা।’”

 বৃদ্ধের শ্রুতি কবিতার প্রতি ছিল না, নাবিকেরা পরস্পর যে কথোপকথন করিতেছিল তাহাই একতানমনঃ হইয়া শুনিতেছিলেন।

 এক জন নাবিক অপরকে কহিতেছিল “ও ভাই—এত বড় কাজটা খারাবি হলো—এখন যে মহাসমুদ্রে পড়লেম—কি কোন দেশে এলেম তাহা যে বুঝিতে পারি না।”

 বক্তার স্বর অত্যন্ত ভয়সূচক। বৃদ্ধ বুঝিলেন যে কোন বিপদ্ আশঙ্কার কারণ উপস্থিত হইয়াছে। সশঙ্কচিত্তে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাঝি কি হয়েছে?” মাঝি উত্তর করিল না। কিন্তু যুবক উত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়া বাহিরে আসিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, যে প্রায় প্রভাত হইয়াছে। চতুর্দ্দিক অতি গাঢ় কুজ্ঝটিকায় ব্যাপ্ত হইয়াছে; আকাশ নক্ষত্র চন্দ্র উপকূল কোন দিকে কিছুই দেখা যাইতেছে না। বুঝিলেন, নাবিকদিগের দিগ্‌ভ্রম হইয়াছে। এক্ষণে কোন্ দিকে যাইতেছে, তাহার নিশ্চ-