পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
কপালকুণ্ডলা।

বস্তুতঃ তাদৃশ রমণী ভূমণ্ডলে অতি অল্পই জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন। সৌন্দর্য্যে ইতিহাসকীর্ত্তিতা স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে তাঁহার প্রাধান্য ঐতিহাসিক মাত্রেই স্বীকার করিয়া থাকেন। কোন প্রকার বিদ্যায় তাৎকালিক পুৰুষদিগের মধ্যে বড় অনেকে তাঁহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন না। নৃত্য গীতে মেহের-উন্নিসা অদ্বিতীয়া; কবিতা রচনায় বা চিত্র লিখনেও তিনি সকলের মনোমুগ্ধ করিতেন। তাঁহার সরস কথা তাঁহার সৌন্দর্য্য অপেক্ষাও মোহময়ী ছিল। মতিও এসকল গুণে হীনা ছিলেন না। অদ্য এই দুই চমৎকারকারিণী পরস্পরের মন জানিতে উৎসুক হইলেন।

 মেহের-উন্নিসা খাস কামরায় বসিয়া তসবীর লিখিতেছিলেন, মতি মেহের-উন্নিসার পৃষ্ঠের উপর বসিয়া চিত্র লিখন দেখিতে ছিলেন, এবং তাম্বুল চর্ব্বণ করিতেছিলেন। মেহের-উন্নিসা জিজ্ঞাসা করিলেন, যে “চিত্র কেমন হইতেছে?” মতিবিবি উত্তর করিলেন “তোমার চিত্র যে রূপ হইয়া থাকে তাহাই হইতেছে। অন্য কেহ যে তোমার ন্যায় চিত্রনিপুণ নহে, ইহাই দুঃখের বিষয়।”

 মেহে। “তাই যদি সত্য হয় ত দুঃখের বিষয় কেন?”

 ম। “অন্যের তোমার মত চিত্রনৈপুণ্য থাকিলে তোমার এ মুখের আদর্শ রাখিতে পারিত।”

 মেহে। “কবরের মাটিতে মুখের আদর্শ থাকিবে,” মেহের-উন্নিসা এই কথা কিছু গাম্ভীর্য্যের সহিত কহিলেন।

 ম। “ভগিনি—আজ মনের স্ফূর্ত্তির এত অল্পতা কেন?”