পাতা:কবিকঙ্কণ চণ্ডী (প্রথম খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 কবিকঙ্কণ-চণ্ডী করিয়াছেন। প্ৰায় চারিশত বৎসর যাবত যে মহাকবির কাব্যসুধা বাঙ্গালীজাতি পান করিয়া আসিতেছেন, বহু গায়কগণ যৎ প্ৰণীত চণ্ডীমঙ্গল নানা বাদ্যযন্ত্র সহকারে বঙ্গের পল্লীতে পল্লীতে গান করিয়া এই দেশকে কবিতার মাধুৰ্য্যে সরস রাখিয়াছেন, যাহার মহিমায় ফুল্লারা ও খুল্লন চরিত্র গৌরবে বঙ্গনারীর আদর্শ হইয়া আছেন,-ঐতিহাসিকতায়, ভাষাতত্ত্ব আলোচনায়, সামাজিকতত্ত্বউদ্ধারে র্যাহার এই পরম কীৰ্ত্তিস্তম্ভ বাঙ্গালার নানাদিকে আলোকরশ্মি বিকীর্ণ করিতেছে,-আমরা সেই কবির আরাধ্যা সিংহবাহিনীর মূৰ্ত্তির জন্য একটি মন্দির গড়িয়া দিতে পারিলাম না, ইহা কি সামান্য ক্ষোভের বিষয় ! আমরা ও'ডায়ার প্রভৃতি শাসক সম্প্রদায়েব মূৰ্ত্তি প্ৰতিষ্ঠার জন্য বৎসর বৎসর বহু সহস্ৰ অৰ্থ প্ৰদান করিয়া কীৰ্ত্তি প্ৰতিষ্ঠার প্রতি অনুরাগ দেখাইয়া থাকি। পাড়াগায়ের প্রাচীনকালীয় ব্ৰাহ্মণ-কবির পূজিত পুতুলটিকে জলে ডুবাইয়া দিলেই নিশ্চিন্ত হইতে পারি। এ সম্বন্ধে আর কিছু লিখিতে গেলে চক্ষে জল আসে। সুতরাং বিস্তৃত মন্তব্যের প্রয়োজন নাই। চণ্ডীকাব্যের এই অংশে মুকুন্দরামের কবিত্বের সমালোচনা করিবার অবকাশ নাই। আশা করি ইহার উত্তর ভাগে চারুবাবু তাহা নিজেই করিবেন। একটি কথা বলিয়াই উপসংহার করিব । কবিকঙ্কণ বঙ্গ সাহিত্যের প্রাচীন ও নূতন যুগের সন্ধিস্থলের কবি । পুরাতন পল্লী সাহিত্যের মাধুৰ্য তাহার রচনায় পৰ্য্যাপ্ত পরিমাণে আছে। এদিকে বঙ্গসাহিত্যে নূতন আমদানি ংস্কৃত শব্দ সম্পদও তাঁহাকে আকর্ষণ করিতেছে। একদিকে “ভাঙ্গাকুড়িয়া তাল পাতের ছাউনি। ভেরেণ্ডার খাম মোর আছে মধ্য ঘরে” প্ৰভৃতি পল্লী ভাষার সহজ রূপ, অপরদিকে “জানু ভানু কৃশানু শীতের পরিত্রান” এই উৎকট পাণ্ডিত্য। একদিকে “বাড়ে যেন হাতি কড়া” “দুই বাহু লোহার সাবলে’র ন্যায় পল্লী-উৎপ্রেক্ষা। অন্য দিকে “বুলে মাতঙ্গগজ গতি, যেন নবরতি পতি” প্ৰভৃতি সংস্কৃত অলঙ্কার শাস্ত্রের আবৃত্তি। ফুল্লারার বারমাসী, কালকেতুর শৈশবলীলা, মুরারি শীলের সহিত কথাবাৰ্ত্তা, বণিক সভায় চন্দন ও মাল্যদান উপলক্ষে বাগবিতণ্ডা, লহনা ও খুল্লনার কোন্দল প্রভৃতি নানা বিষয়ের বর্ণনায় পল্লী-ভাষার পল্লী চিত্রগুলি সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। ঐ সকল চিত্রে আমােকাঁঠালের বনে ঘেরা কুড়ে গুলির ও বটাশ্বন্থের আৱছায়ায় বাঙ্গালার