পাতা:কমলাকান্ত - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
কমলাকাস্তের দপ্তর।

বসুন্ধরে! তোমারই বা ক্ষতি কি, আমারই বা ক্ষতি কি? তুমি অনন্ত কাল, শূন্যপথে ঘূরিবে, আমি আর অল্প দিন ঘুরিব মাত্র। তার পরে তোমার কপালে ছাইগুলি দিয়া, যাঁর কাছে সকল জ্বালা জুড়ায়,তাঁর কাছে গিয়া সকল জ্বালাজুড়াইব।

 তবে, স্থির হইল এক প্রকার যে, বুড়া বয়সে পড়িয়াছি। এখন কর্ত্তব্য কি? “পঞ্চাশোর্দ্ধে বনং ব্রজেৎ?” এ কোন গণ্ডমুর্খের কথা। আবার বন কোথা? এ বয়সে, এই অট্টালিকাময়ী লোকপূর্ণা আপণীসমাকুলা নগরই বন। কেন না, হে বর্ষীয়ান পাঠক! তোমার আমার সঙ্গে আর ইহার মধ্যে কাহারও সহৃদয়তা নাই। বিপদ‍্কালে কেহ কেহ আসিয়া বলিতে পারে যে, “বুড়া! তুমি অনেক দেখিয়াছ, এ বিপদে কি করিব বলিয়া দাও,—”, কিন্তু, সম্পদকালে কেহই বলিবে না, “বুড়া! আজি আমার আনন্দের দিন, তুমি আসিয়া আমাদিগের উৎসব বৃদ্ধি কর!” বরং আমোদ আহলাদ কালে বলিবে, “দেখ ভাই, যেন বুড়া বেটা জানিতে না পারে।” তবে আর অরণ্যের বাকি কি?