পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১০
কলিকাতার ইতিহাস।

হন। জমিদারের প্রধান বা সদর কাছারী কলিকাতায় অবস্থিত ছিল; তথায় তিনি জমি প্রজাবিলি করিতেন এবং কোন প্রজা যথাসময়ে খাজনা দিতে না পারিলে তিনি তৎকালপ্রচলিত অন্য কোন বিচারালয়ে বিচারপ্রার্থী না হইয়া স্বয়ংই তাহাকে কারাবদ্ধ করিয়া ও বেত্রাঘাত করিয়া দণ্ডপ্রদান করিতেন। জমিদারের কর্ত্তব্যকর্ম্ম সম্বন্ধে হলওয়েল সাহেব এইরূপ বলেন-তাঁহার দুইটী ক্ষমতা ছিল, সে দুইটী ক্ষমতা পরস্পর হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও বিভিন্ন। তিনি সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট ও কলেক্টর ছিলেন, এবং তদ্ভিন্ন জমিদারী কাছারীর অধ্যক্ষ অর্থাৎ বিচারপতি ছিলেন। এই পদের বেতন মাসিক ২০০০৲ টাকা নির্দ্দিষ্ট ছিল। কিন্তু হলওয়েল সাহেব বলেন, তাহার উপরি-পাওনারও তুলনায় এই বেতন কিছুই নহে। কথিত আছে যে, “বিভিন্ন কুঠির আয়ের অধিকাংশই তাঁহার পকেটে যাইত। তদ্ভিন্ন তিনি নিজে স্বতন্ত্রভাবে বাণিজ্য করিতেন, এবং তাহা হইতেও প্রভূত লাভ পাইতেন। •••••• তদানীন্তন প্রবলবাত্যাসঙ্কুল রাজনৈতিক ঝটিকায় তথাকথিত প্যাগোডা বৃক্ষ প্রকম্পিত হইলে তাঁহার উদরপুর্ত্তির যথেষ্ট সুযোগ ঘটিত।”

 উল্লিখিত আছে যে, যে সকল স্থলে দেশীয়েরা ইংরেজধর্ম্মাধিকরণে বিচারপ্রার্থী না হইত, তত্তাবৎ স্থলে জমিদারই সমস্ত ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার করিতেন। তিনি দেশীয়দিগের মধ্যে সর্ব্বপ্রকার পরিমাণ টাকার মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করতেন। কেবল প্রাণদণ্ডজন্য অপরাধের মোকদ্দমাতেই তিনি রায় প্রকাশ করিতে পাইতেন, কিন্তু যে স্থলে চাবুকের প্রহারে[১] মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা


  1. প্রাচীন মোগলসম্রাট্ ও নবাবগণ মুসলমানদিগকে ইংরেজদিগের প্রথানুপ্রাচীন মোগলসম্রাটু ও নবাবগণ মুসলমানদিগকে ইংরেজদিগের প্রথা-সারে কঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়া মৃত্যুদণ্ড গ্রহণ কুরিতে দিতেন না, কারণ তাঁহাদের মতে মুসলমানের পক্ষে ঐরূপ মৃত্যু নিতান্ত অবমাননজনক; সুতরাং প্রাণদণ্ড-যোগ্য অপরাধের স্কুলে মোগলরাজের মুসলমান ও জেণ্ট (হিন্দু) অপরাধী প্রজাদিগকে এরূপ কশাঘাত করা হইত যে, তাহাতেই তাহারা মৃত্যুমুখে পতিত হইত, পরন্তু চাবুক সাওয়ার নামক কর্ম্মচারী সময়ে সময়ে এরূপ কার্য্য পটু হইত যে তাহারা ভারতীয় চাবুকের দুই তিন আঘাতেই দণ্ডিত ব্যক্তিকে শমন-ভবনে প্রেরণ করিতে পারিত।” ষ্টার্ণণ্ডেল সাহেব কৃত কলিকাতা কলেক্টরের ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত।