পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
কলিকাতার ইতিহাস

পুণ্যজনক বা পাপজনক বলিয়া বিবেচিত হয় না। মানুষের ধর্ম্মই তাহার উন্নতির অবস্থার পরিচায়ক। ইহা সর্ব্বজনবিদিত যে, জাতিবিশেষ ও ব্যক্তিবিশেষ তাহাদের উন্নতির ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন প্রকার হইয়া থাকে; আর যে কাজ একের পক্ষে হিতকর তাহাই অন্যের পক্ষে অহিতকর বিবেচিত হইয়া থাকে। ক্রমোন্নতির এই নীতিসূত্র অবগত থাকায় প্রাচীন ঋষিরা সমগ্র হিন্দুজাতিকে চারি প্রধান ভাগে অর্থাৎ জাতিতে বিভক্ত করিয়াছেন,—ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

 জন্মদ্বারাই মানুষের জাতি নির্দ্ধারিত হয়; আর হিন্দুর দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, মানুষের ‘কর্ম্ম’ (অর্থাৎ পূর্বজন্মের কার্য্যাবলী অনুসারে বিধাতা তাহার জাতি নির্ধারণ করিয়া দেন। হিন্দু জানে, কর্ম্মানুসারে ফলভোগ-নীতি কেবল সংসারিক বিষয়ে নহে, আধ্যাত্মিক বিষয়েও তুল্যরূপ সত্য। সুতরাং এই কর্ম্মনীতিই হিন্দুধর্মের মূল সূত্র। এই নীতির মর্ম্ম এই যে, কর্ম্ম-মাত্রেই (মনের চিন্তা এবং অভিলাষও কর্ম্মের অন্তর্গত) উপযুক্ত ফল প্রসব করে, এবং যত দিন মানুষের কন্মে আসক্তি থাকে, তত দিন সেই ফল তাহাকে ছাড়ে না,—ইহজন্মেই হউক বা পরজন্মেই হউক, সেই কর্ম্মফল তাহাকে ভোগ করিতে হইবে। মানুষ ইহজন্মে সুখ বা দুঃখ যাহা কিছু ভোগ করে, তাহার যথোপযুক্ত কারণ আপাততঃ দেখা না গেলেও বুঝিতে হইবে, তাহা উহার পূর্ব্ব জন্মের কৃতকর্ম্মের ফল। যত দিন কর্ম্মফলে মানুষের আসক্তি থাকে, তত দিন সেই কর্মের ফলভোগ করিবার নিমিত্ত তাহাকে পুনঃপুনঃ জন্মগ্রহণ করিতে হইবে; আসক্তিশূন্য হইয়া অর্থাৎ ফলের প্রতি লক্ষ্য না রাখিয়া যখন কর্ম্ম করিতে পারা যাইবে,