পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ অধ্যায়
৩৪১

তখনই কর্ম্ম এবং কর্ম্মকর্ত্তার সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হইবে। আর ইহা করিবার একমাত্র উপায়, নিজের স্বাতন্ত্র-জ্ঞানবর্জিত হওয়া ও আত্মজ্ঞান লাভ করা। এইভাবে কর্ম্ম করিলে তাহার ফল মানুষের নিজের উপর না পড়িয়া সমস্ত বিশ্বের উপর পতিত হয়, সুতরাং অধিকতর কার্য্যকর হয়। এইরূপ মুক্তিলাভই হিন্দুর চরম লক্ষ্য, এবং হিন্দুশাস্ত্রসমূহ এই মুক্তিলাভের পথ প্রদর্শন করিতেছে। এ বিষয়ের যথোচিত উপদেশদানই ব্রাহ্মণদিগের প্রধান কর্তব্য, কারণ তাঁহারা যে ভাবে জীবন যাপন করিতে আদিষ্ট হইয়াছেন, তাহাতে তাঁহারাই এই কার্য্যের সম্পূর্ণ উপযুক্ত। কর্ম্মফলে বিশ্বাসের দৃষ্ট ফল সন্তোষ, কারণ হিন্দুমাত্রেই জানে যে, তাহার অদৃষ্ট সে নিজেই করিয়া লইয়াছে। হিন্দুধর্ম্মের প্রধান কয়েকটি ভাবের কথাই এস্থলে সক্ষেপে উল্লিখিত হইল।

 শ্রীযুক্ত এন্, এন্, কোষ স্বপ্রণীত মহারাজ নবকৃষ্ণের জীবনচরিতে লিখিয়াছেন;—“হিন্দু ধর্ম্ম কেবল কতকগুলি নীতির সংগ্রহমাত্র নহে, প্রত্যুত ইহা অদৃষ্টের ব্যাখ্যা। ইহা মানুষের উৎপত্তি ও চরম লক্ষ্য সম্বন্ধে অনেক বিশেষ কথাই আমাদিগকে বলিয়া দেয়। ইহা আমাদিগকে আধ্যাত্মিক তত্ত্বসমূহ লাভ করিবার ও পরলোকের সহিত সংযোগসাধন করিবার উপায় প্রদর্শন করে।” হিন্দুর চরম লক্ষ্য সুখ নহে,—মুক্তি; সুতরাং হিন্দুর নিকট ইহজীবন সেই পরিমাণে মূল্যবান্, যে পরিমাণে ইহা তাহাকে মুক্তিলাভকাল পর্যন্ত জন্মজন্মান্তর ব্যাপিয়া সেই মহাযাত্রার জন্য প্রস্তুত করিতে সমর্থ হয়। চারি জাতির কর্ত্তব্য ও জীবনযাপনের নিয়মাবলী প্রধানতঃ, মনুসংহিতাসমুদয়ে নিবদ্ধ আছে। যে সকল ঋষি ঐ সকল সংহিতা প্রচার করিয়াছেন, তাঁহাদের নামানুসারে