পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৪
কলিকাতার ইতিহাস

সমাজনীতির ও ইউরোপের সামাজিক জীবনের বিবিধ জটিল অবস্থায় ইতোমধ্যেই প্রকাশ পাইতে আরম্ভ করিয়াছে।

 শিল্পবিজ্ঞানের সহায়তায় ও ধনদ্বারা লভ্য সর্ব্বপ্রকার সুখ ও ভোগবিলাস সংগ্রহ করাই পাশ্চাত্যদিগের চরম লক্ষ্য। প্রাচীন হিন্দুদিগের লক্ষ্যের সহিত কি বৈষম্য! হিন্দু সাংসারিক সুখদুঃখে সম্পূর্ণ উদাসীন। কিরূপে আত্মজ্ঞান লাভ করা যায়, কিরূপে পূর্ণতা প্রাপ্ত হওয়া যায়, কিরূপে পরব্রহ্মের সহিত যোগ সাধন করা যায়—এই সমস্তই তাহার চরম লক্ষ্য। এই প্রাচীন আদর্শ হইতে অধঃপতনের কথা ভাবিতে চিত্ত বিষাদময় হইয়া উঠে। বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, যেরূপ লক্ষণ প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, সমাজের মূলভিত্তি ক্রমশঃ শিথিল হইতেছে। বর্ক সত্যই বলিয়াছেন;—“সে আঘাতে প্রাচীন আচার ব্যবহার ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, তাহা অপেক্ষা ভয়ের কারণ আর কিছুই হইতে পারে না। প্রাচীন মত ও সংসারনীতি অপনীত হইলে যে ক্ষতি হয়, তাহার পরিমাণ নির্দ্ধারণ অসম্ভব হইয়া পড়ে। সেই মুহূর্ত্ত হইতে আমাদিগকে শাসনে রাখিবার যন্ত্র আমরা হারাইয়া বসি।’’

 প্রকৃত হিন্দুর জীবনে কি উচ্চ আদর্শ, কি মহান আত্মত্যাগ, কি উদার ও স্বর্গীয় চরিত্র অঙ্কিত হইয়াছে! শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অগ্নিময়ী ভাষায় বলিয়াছেন—“রাম ও যুধিষ্ঠির অপেক্ষা মহত্তর চরিত্র আমরা কোথায় পাইব? রামায়ণ ও মহাভারতে যে নীতি-উপদেশ প্রদত্ত হইয়াছে, তদপেক্ষা উচ্চতর উপদেশ আমরা কোথায় পাইব? সত্যপালনের পূণ্য, মাতাপিতার আদেশ পালনের কর্ত্তব্যতা, অবশ্যকর্ত্তব্য কর্মসমূহের সম্পাদনের আবশ্যকতা