পাতা:কলিকাতা কল্পলতা - রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় অধ্যায়

বিষয় চিন্তা করিলে চমকৃত হইতে হয়। যেরূপ বায়সভুক্ত বটবীজ অঙ্কুরিত হইয়া শত শত জীবের আশ্রয়দাতা সুবিস্তীর্ণ ছায়াসমন্বিত প্রকাণ্ড বৃক্ষরূপে শোভা পাইতে থাকে, যেরূপঅণুমাত্র অনল স্ফুলিঙ্গ কর্তৃক স্বল্পকাল মধ্যে ভয়াবহ দাবদাহ আবির্ভূত হইয়া থাকে এবং হিমালয় শিখরোপরে তুষাররাশিচ্যুত রজত রেখাকার তটিনীসকল সঞ্চিত হইয়া পরিণামে কত কত শৈলভেদপূর্ব্বক বর্ধিষ্ণুবেশে গিরিতলে পতিত হইয়া সহস্রাধিক ক্রোশ ব্যবধানে সিদু শাখাবৎ আকৃতি ধারণকরিতেছে, সেইরূপভারতবর্ষেইংরাজদিগের আধুনিক প্রবল পরাক্রমের নিদানস্বরূপ এই বাঙ্গালাদেশে ক্ষুদ্র এক বাণিজ্যালয় স্থাপনমাত্র।

ইংরাজী ১৬৩৪ অব্দে যেসময়েশাহজাহানপাশাহভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্যে বিগ্রহার্থ প্রবাস করিতেছিলেন, সেই সময় তাহার এক দুহিতার বস্ত্রে একদা দৈবাৎ অনল সংলগ্ন হওয়ায় তাহার শরীর গুরুতররূপে দগ্ধ হইয়া যায়। সেই রাজকুমারীর যাতনা প্রতিকার নিমিত্তসুরাটস্থ ইংলণ্ডীয় বাণিজ্যকুটি হইতে জনৈকইংরাজচিকিৎসক আনয়নার্থা সংবাদ প্রেরিত হইলে বোটন নামক একজন সাহেব উক্ত কার্য্যে বৃত হন। সৌভাগ্যবশতঃ তাঁহার চিকিৎসা কৌশলে নৃপনন্দিনী সম্পূর্ণরূপেআরোগ্যলাভকরাতে সম্রাটমহোদয়কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনার্থ বোটনকেকহিলেন—“তোমার ইচ্ছানুসারে আমি পুরস্কার করিব, অতএব তোমার কি ইচ্ছা কহ।”

উদারচিত্তস্বদেশহিতৈষী বোটন কহিলেন—“আমার আত্মস্বার্থে কিছু প্রার্থনা নাই। আমার দেশীয় লোকেরা বাঙ্গালাদেশে শুল্কবিরহে বাণিজ্য করিবার জন্য বাণিজ্যালয় স্থাপনের অনুমতি পাইলেই আপনাকে প্রভূতরূপে জ্ঞান করিব।”

সম্রাট যদিও “তথাস্তু” বলিয়া বরপ্রদান করিলেন বটে কিন্তু