পাতা:কল্পদ্রুম - দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ.pdf/৬৯৯

হিন্দুদিগের বহির্বাণিজ্য । , \ున ) কিন্তু আমাদেরও হৃদয় হয় ত সময়ে সময়ে আমাদের রোদনধ্বনি শুনিতে পায় না ! তাই অনেক স্থলে অরণ্যে রোদন হইয়া থাকে। সত্য,কথা বলিকে কি, বৰ্ত্তমান সময়ে বাঙ্গালির অবস্থা আতিশয় শোচনীয় হইয়াছে । বাঙ্গালি বাহিরে চাকচক্যশালী, যেন দিন দিন কতই উন্নত হইতেছে ; কিন্তু ভিতরে অস্তঃসারশূন্য বালুকাকণা, অনবরত ধু ধূ করিতেছে! রাজপুরুষের আমাদের বাহ্য চাকচক্য দেখিয়া আমাদিগকে সুখী জ্ঞান করিয়া থাকেন। কিন্তু ভিতরের সংবাদ বুঝিতে পারেন না ; বুঝিলেও অনেকস্থলে কথা কন না ! আমরা চির কালই রাজভক্ত জাতি । রাজাকে দেবতার অংশ বোধে পূজা করিয়া থাকি। রাজসাক্ষাৎ লাভকে আমরা পুণ্য মনে করি। এ কারণ কোন রাজপুরুষ আসিলে আমরা তাহাকে দেখিবার জন্য সোৎসুক চিত্তে ভাল বস্ত্র পরিধান করিয়া যাই । এ অবস্থায় রাজপুরুষেরা আমাদের অঙ্গে পরিস্কার বস্ত্র, মস্তকে ছত্র, চরণে উপানৎ দেখিয়া সাধারণ্যে মনে করেন বাঙ্গালী বড় সুখী ! কিন্তু বহুতর বাঙ্গালির গৃহে পিপীলিকাও অন্নের জন্য কাদিয়া থাকে । o আমাদের অবস্থা বড়ই শোচনীয়। এ সময় উপেক্ষা করিয়া থাকিলে এক এক দুর্ভিক্ষে মান্দ্রাজ ও উড়িষ্যা প্রদেশের ন্যায় লক্ষ লক্ষ লোক অনশন ব্রতাবলম্বী হইয়া আয়ুঃসত্ত্বেও অকালে জীবনত্যাগ করবে। দেশে আৱ অধিক অর্থ নই ; যাহাও মাছে তাহ সাইলকজাতীয় ব্যক্তিগণের হস্তে । সমাজের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র । যে সমাজের অধিকাংশ ব্যক্তি দরিদ্র, চমৎকার অন্ন চিন্তায় সৰ্ব্বদা বিব্রত, সে সমাজের উন্নতি হওয়া সন্দেহ স্থল। দারিদ্র্য দোষ সকল উন্নতির প্রতিবন্ধক স্বরূপ। নির্ধন হইতে শিল্প, বিজ্ঞান, বাণিজ্যাদি কিছুরই উন্নতি হইয়া দেশ উন্নত হইতে পারে না7 দেশ উন্নত হওয়া দূরে থাকুক, তাহার নিজেরও হৃদয়োখিত মনোভাব কাৰ্য্যে পরিণত না হইয়া অনেক স্থলে হৃদয়েই বিলীন হইয়া থাকে। নীতিজ্ঞেরা দারিদ্র্য দোষকে গুণরাশি নাশের কারণ বলিয়াছেন । দারিদ্র আবহমান কালই সমাজে নিন্দনীয়। এমন কি মহাভারতের শান্তিপর্বেও দারিদ্র্যের গুণ ব্যাখ্যা করা হইয়াছে । সে ব্যাখ্যা এই— অর্থেনেহ বিহীনস্য পুরুষস্যাল্পমেধসঃ । বিচ্ছিদ্যন্তে ক্রিয়াঃ সৰ্ব্ব গ্রীষ্মে কুসরিতোযথা ॥ যস্যার্থাস্তস্য মিত্ৰাণি-যস্যার্থাস্তস্য বান্ধবঃ।