পাতা:কল্পনা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

‘বৈশাখ’ কবিতার মধ্যে মিশিয়ে আছে শান্তিনিকেতনের রুদ্র মধ্যাহ্নের দীপ্তি। যেদিন লিখেছিলুম সেদিন চারি দিক থেকে বৈশাখের যে তপ্ত রূপ আমার মনকে আবিষ্ট করেছিল সেইটেই ওই কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। সেই দিনটিকে যদি ভূমিকারূপে ওই কবিতার সঙ্গে তোমাদের চোখের সামনে ধরতে পারতুম তা হলে কোনো প্রশ্ন তোমাদের মনে উঠত না।

 তোমার প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে নীচের দুটি লাইন নিয়ে—

ছায়ামূর্তি যত অনুচর
দগ্ধতাম্র দিগন্তের কোন্ ছিদ্র হতে ছুটে আসে!

খোলা জানালায় বসে ওই ছায়ামূর্তি অনুচরদের স্বচক্ষে দেখেছি, শুস্ক রিক্ত দিগন্ত প্রসারিত মাঠের উপর দিয়ে প্রেতের মতো হু হু করে ছুটে আসছে ঘূর্ণানৃত্যে, ধুলোবালি শুকনো পাতা উড়িয়ে দিয়ে। পরবর্তী শ্লোকেই ভৈরবের অনুচর এই প্রেতগুলোর বর্ণনা আরো স্পষ্ট করেছি, পড়ে দেখো।

 তার পরে এক জায়গায় আছে—

সকরুণ তব মন্ত্র-সাথে
মর্মভেদী যত দুঃখ বিস্তারিয়া যাক বিশ্ব-’পরে।

এই দুটো লাইনেরও ব্যাখ্যা চেয়েছ। সেদিনকার বৈশাখমধ্যাহ্নের সকরুণতা আমার মনে বেজেছিল ব’লেই ওটা লিখতে পেরেছি। ধু ধু করছে মাঠ, ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্‌দুর, কাছে আমলকী গাছগুলোর পাতা ঝিল্‌মিল্‌ করছে, ঝাউ উঠছে নিশ্বসিত হয়ে, ঘুঘু ডাকছে স্নিগ্ধ সুরে— গাছের মর্মর, পাখিদের কাকলি, দুর আকাশে চিলের ডাক, রাঙা মাটির ছায়াশূন্য রাস্তা দিয়ে মন্থরগমন ক্লান্ত গোরুর গাড়ির চাকার আর্ত স্বর, সমস্তটা জড়িয়ে মিলিয়ে যে-একটি বিশ্ব-

১২৯