পাতা:কাঙ্গাল হরিনাথ (দ্বিতীয় খণ্ড) - জলধর সেন.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিরাকার ও সাকার সম্বন্ধে কাঙ্গাল হরিনাথ ব্ৰহ্মাণ্ডবেদে বলিতেছেন । যে, জলের কোন নির্দিষ্ট আকার নাই; সুতরাং জল সগুণ হইলেও এক প্ৰকার নিরাকার। কারণ, যেমন আধারে রাখ, জল সেইরূপ আকারবিশিষ্ট হয়। জলের ন্যায় নিরাকারও সাধকের হৃদয়ানুসারে নানা আকার ধারণ করে। কোন এক নির্দিষ্ট আকার-বিশিষ্ট নহে, এই নিমিত্ত আধ্যাত্ম নিগুণ-রূপকে নিরাকার বলে । জলের সহিত ঐ আকারের পার্থক্য এই যে, জলে যেমন ইন্দ্ৰিয়গ্ৰাহ স্বাদস্পর্শদি আছে, এ আকারে তদ্রুপ কিছু নাই। অথচ, যাহা আছে, তাহা ইন্দ্ৰিয়াতীত, কেবল আত্মার গ্ৰাহ । নিরাকার-রূপ অনন্ত এবং আকাশের ন্যায় অসীম। সাধক অর্থাৎ আত্মা পঞ্চভূতে আবদ্ধ হইয়া মনুষ্যনাম গ্ৰহণ করিয়াছে। সুতরাং তাহার হৃদয়-আকাশ ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র হৃদয়ে অনন্তদেবের অনন্ত রূপ, অনন্ত ভাব কিরূপে ধারণা করিবে ? এই নিমিত্ত হৃদয়ের বিস্তৃতি অনুসারে ভগবানেরও প্রকাশ হইয়া থাকে। শালগ্রামের স্নানার্থ মন্ত্রে “তুমি দশাঙ্গুলি পরিমিত হও” যে উক্ত হইয়াছে, তাহার তাৎপৰ্য্য এই যে, মনুষ্যের হৃদয়স্থান দশাঙ্গুলি পরিমাণের অধিক বিস্তৃত নহে। সুতরাং সাধক দশাঙ্গুলি পরিমিত প্রার্থনা করিয়াছেন । তাকিকগণ এ স্থলে তর্ক উপস্থিত করিতে পারেন যে, ভগবান যদি এইরূপে সীমাবদ্ধ ও পরিমিত আকার-বিশিষ্ট হইলেন, তাহা হইলে র্তাহার অখণ্ডত্ব ও অনন্তত্ব নষ্ট হইল। আমি বলিতেছি, নষ্ট না হইয়া বরং তাহার আধিক্যই হইল। তর্ক পরিত্যাগ পূৰ্ব্বক একবার চিন্তা করিয়া দেখিলেই তাহা স্পষ্ট হৃদ্বোধ হইতে পারে। জলে বুদ্ভুদ উঠতেছে ; তাহাতে কি জলের নূনাধিকা হইয়া থাকে ? আবার জলবিম্ব যেমন জলেই মিশাইয়া যায়, সেইরূপ ভগবানও সাধকের হৃদয়ে প্ৰকাশিত হইয়া আবার আপনার অনন্ত ও অখণ্ড স্বরূপে মিশাইয়া যান। 8v)