পাতা:কাঙ্গাল হরিনাথ (দ্বিতীয় খণ্ড) - জলধর সেন.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই প্ৰসঙ্গ উপলক্ষে কাঙ্গাল হরিনাথ পুনরায় বলিতেছেন-যোগ ও ভক্তিতত্ত্ব ব্যতীত প্ৰণিধান জ্ঞান ক্ৰমে শুষ্ক ও কঠিন হইয়া আবদ্ধ হয়। জ্ঞান আবদ্ধ হইলে, বদ্ধ জলের ন্যায় রূপান্তরিত হইয়া ক্ৰমে দুষ্ট হইতে থাকে। দুষ্ট জ্ঞানই অজ্ঞানতার কারণ এবং অজ্ঞানতাই ব্যভিচারের গর্ভধারিণী। আবার যোগ ও ভক্তি ব্যতীত ঈশ্বরানন্দ লাভ করিতে কাহারও সাধ্য নাই। ঈশ্বরানন্দের অভাব হইলে লোকে বাহৈশ্বৰ্য্যসুখই আনন্দ বলিয়া গ্ৰহণ করে এবং তাহার হেতু স্বরূপ অর্থের উপাৰ্জন করিতে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়। এই সকল কারণে জ্ঞানের যে ব্যভিচার ঘটে, তাহাতে পৃথিবী কতদূর প্রপীড়িত ও মনুষ্য রক্তে দূষিত হইয়াছে, পৌত্তলিকতা নিবারণার্থ মুসলমান ও খৃষ্টান এবং মুসলমান ও হিন্দুতে যে সকল যুদ্ধ হইয়াছে, তাহা স্মরণ করিলেই ইহার প্রচুর প্রমাণ দেখিতে পাইবেন। এই সকল কারণে যে ভ্ৰাতৃবিরোধ উপস্থিত হইয়াছে, কত শতাব্দী পর কত শতাব্দী গত হইল, কিন্তু এখনও সেই বিরোধ বিদূরিত হইল না। ব্যভিচার জন্য উক্ত বিরোধ হিন্দু ও মুসলমানকে কোথায় নিক্ষিপ্ত করিয়াছে, তাহা চিন্তা ও আলোচনা করিলে অভেদজ্ঞানী হিন্দু ও মুসলমান মাত্রই নেত্রনীরে বক্ষস্থল সিক্ত করিয়া থাকেন। অনেকে বলিয়া থাকেন,-জাতিভেদ জন্য পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দ্বেষাদি উক্ত ভ্ৰাতৃবিরোধের কারণ ; কিন্তু আমরা জ্ঞানের ব্যভিচারই তাহার নিদান বলিয়া উল্লেখ করিতেছি। কারণ, হিন্দুদিগের প্রাচীন গ্ৰন্থ ও পরমার্থতত্ত্ব আলোচনা করিলে জানা যায়, জাতিভেদ এক্ষণে যে অবস্থায় উপস্থিত হইয়াছে, তাহার মূল তদ্রুপ ছিল না। শুদ্ধাচারী ঈশ্বর-ভক্তগণ ভ্ৰষ্টাচারী অভক্তগণের সহিত মিশিতেন না-জাতিভেদের মূলে কেবল এইমাত্র ছিল; কিন্তু ইহারা কাহাকেও ঘূণা করিতেন না। হিন্দুশাস্ত্ৰে যে বৰ্ণাশ্রমের বিস্তৃত বর্ণনা দেখিতে পাওয়া যায়, তাহারও উদ্দেশ্য এখানকার ন্যায় পরমার্থবিরোধী । (8